ডেস্ক রিপোর্ট: ২৮ জুলাইয়ের মধ্যে দাবী মানা না হলে ২৯ জুলাই থেকে সিলেট বিভাগজুড়ে ফের পরিবহন ধর্মঘটের হুঁশিয়ারী।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে সাতগাঁও হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই নান্নু মণ্ডলের অপসারণের দাবিতে মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে তিনটি শ্রমিক সংগঠনের ডাকা অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘট স্থগিত করা হয়েছে।
কর্মবিরতির ডাক দেওয়া তিনটি সংগঠনের মধ্যে রয়েছে কার,মাইক্রোবাস,জীপ, মিনিবাস-বাস শ্রমিক ইউনিয়ন,ট্রাক-ট্যাংকলরি-কাভার্ড ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন এবং সিএনজি-অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন। একই দাবিতে বিকেল ৫টায় শহরের চৌমুহোনায় শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সমাবেশে স্থানীয় ও জেলার পরিবহন শ্রমিক নেতারা এ ঘোষণা দেন। তারা বলেন, আগামী ২৮ জুলাইর মধ্যে হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ নান্নু মন্ডলকে এ ফাঁড়ি থেকে প্রত্যাহার করা না হলে,২৯ জুলাই থেকে সিলেট বিভাগ জুড়ে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয়া হবে বলে সভা থেকে কঠোর হুশিয়ারি দেয়া হয়।
জেলা বাস, মিনিবাস পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন(১২২৩) মৌলভীবাজার জেলা শাখার সভাপতি সঞ্জিত কুমার দেবের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের আইন বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা ট্রাক, ট্যাংকলরি কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন(২৪০৩) মৌলভীবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আজাদুর রহমান অদুদ, বাংলাদেশ অটো টেম্পু শ্রমিক ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা অটো টেম্পু শ্রমিক ইউনিয়নের(২৩৫৯) সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক সেলিম, বাস মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের(১২২৩) মৌলভীবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ, জেলা অটো টেম্পু শ্রমিক ইউনিয়নের(২৩৫৯) জেলা শাখার সভাপতি মো.পাভেল আহমদ, কার, মাইক্রোবাস, জীপ, মিনিবাস (১২২৩) শ্রমিক ইউনিয়নের শ্রীমঙ্গল উপজেলা শাখার সভাপতি মো.ময়না মিয়া, জেলা শ্রমিক ইউনিয়ন নেতা বীরমুক্তিযোদ্ধা মো.আব্দুল গণি নুরু মিয়া,শাহজাহান মিয়া,সানু মিয়া ও আলম মিয়া। সভা চলাকালে পুলিশ,র্যাব সদস্যরা চারদিক ঘিরে রাখে। আইনশৃঙ্খলায় নেয়া হয় সবোর্চ্চ সতর্কতা।
এর আগে সোমবার রাত সাড়ে দশটায় শহরে মাইকিং করে উপজেলা পরিবহন শ্রমিক ঐক্য পরিষদ এই শ্রমিক ধর্মঘটের ডাক দেয়। আকস্মিক এই কর্মবিরতির ফলে মঙ্গলবার সকাল থেকেই রাস্তায় যানবাহন না পেয়ে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা ও সাধারণ মানুষজন দুর্ভোগে পড়েন।
শ্রমিক নেতাদের অভিযোগ, সাতগাঁও হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নান্নু মণ্ডলের নেতৃত্বে পুলিশ মৌলভীবাজার-ঢাকা আঞ্চলিক মহা সড়কের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন যানবাহনের কাগজপত্র পরীক্ষার নামে চাঁদাবাজি করছে। দাবিকৃত চাঁদা না দিলে মামলা দেওয়াসহ চালকদের সঙ্গে তিনি (নান্নু মন্ডল) অসৌজন্যমূলক আচরণ করছেন।
কার-মাইক্রোবাস-বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়ন শ্রীমঙ্গল উপজেলা শাখার সভাপতি মো. ময়না মিয়া বলেন, গত ১৫ জুন সাতগাঁও হাইওয়ে পুলিশ আমাদের এক পরিবহন শ্রমিকের লাশের গাড়ি থামিয়ে চাঁদা দাবি করে। এর প্রতিবাদে আমরা সড়ক অবরোধ করি। তখন উর্দ্বোতন পুলিশ কর্মকর্তাদের আশ্বাসে অবরোধ প্রত্যাহার করি। কিন্তু একমাসেও এর সুষ্ঠু বিচার পাইনি।
ট্রাক-ট্যাংকলরি-কাভার্ড ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন শ্রীমঙ্গল উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, গত ১৫ জুনের ঘটনার পর থেকে সাতগাঁও পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। সড়কে তার নৈরাজ্য, চাঁদাবাজি আরো বেড়ে গেছে। তাই বাধ্য হয়েই আমরা এমন কর্মসূচি দিতে বাধ্য হয়েছি।
এদিকে হঠাৎ করে রাস্তায় যানবাহন না পেয়ে সাধারণ মানুষ দুর্ভোগে পড়েন। জেলার কমলগঞ্জ,ভানুগাছ, মৌলভীবাজার সদরসহ বিভিন্ন এলাকার অফিস যাত্রীরা বিড়ম্বনায় পড়েন। বাস-মিনিবাস-অটোরিকশা না পেয়ে এইসব যাত্রীরা মোটরচালিত রিকশা কিংবা টমটম ভাড়া করে গন্তব্যে পৌঁছাতে চেষ্টা করছেন। মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরাও যানবাহন না পেয়ে বিপাকে পড়েন। শিক্ষার্থীদের অনেকেরই পরীক্ষা ছিল। অসহায়ত্ব প্রকাশ করে শিক্ষার্থীরা বলেন, হঠাৎ করে ধর্মঘট ডাকাটাও তো বেআইনি। এসব নৈরাজ্য দেখার কী কেউ নেই? বলে প্রশ্ন তোলেন তিনি। উপজেলার অভ্যন্তরীণ সড়কে অটোরিক্সা সিএনজি না পেয়ে পাঁয়ে হেঁটে অনেককে চলাচল করতে দেখা গেছে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাতগাঁও হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নান্নু মণ্ডল বলেন, তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। উল্টো পরিবহন শ্রমিকরাই সড়কে আইনকানুন না মেনে যানবাহন চালাচ্ছে।
শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুছ ছালেক বলেন, শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন ছিল। যাতে কেউ দূরপ্লালার যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে না পারে।