শ্রীমঙ্গলে আদিবাসী ইস্যুতে অ্যাডভোকেসি সভা ও মানববন্ধন

প্রকাশিত: ৭:৩১ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৬, ২০১৯
ছবি- ধলাইর ডাক

শ্রীমঙ্গল সংবাদদাতা: আদিবাসীদের ভূমির অধিকার ও মালিকানা এবং আদিবাসীদের ভাষার চর্চা ও সংরক্ষণ বিষয়গুলোকে সামনে রেখে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), টিআইবি শ্রীমঙ্গল এবং বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী ফোরাম এর যৌথ উদ্যোগে এক অ্যাডভোকেসি সভা ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সনাক কার্যালয়ে আয়োজিত আদিবাসী ইস্যু বিষয়ক অ্যাডভোকেসি সভায় সভাপতিত্ব করেন সনাক’র সহ-সভাপতি দ্বীপেন্দ্র ভট্টাচার্য। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রীমঙ্গলের উপজেলা নির্বাহী অফিসার নজরুল ইসলাম।

টিআইবি’র এরিয়া ম্যানেজার পারভেজ কৈরীর সঞ্চালনায় সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী ফোরামের মহাসচিব ফিলা পাথমী। মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলার আদিবাসীদের ভূমির অধিকার ও মালিকানা এবং আদিবাসীদের ভাষার চর্চা ও সংরক্ষণ বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সনাক শ্রীমঙ্গল এর সদস্য ও বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী ফোরামের কো-চেয়ারপার্সন জিডিশন প্রধান সুছিয়াং। এরপর মুক্ত আলোচনা শুরু হয়।

অ্যাডভোকেসি সভায় বক্তারা বলেন, ভাষা, ধর্মাচার, পারিবারিক জীবন ব্যবস্থা সবকিছুতেই ভিন্নতা নিয়ে বসবাসকারী আদিবাসীরা আজো এদেশে ভূমির মালিকানা পায়নি। ভূমি উন্নয়নের নামে তাদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে, তারা দিন দিন ভূমিহীন হয়ে পড়ছেন। এ কারণেই আদিবাসীরা আজো স্থায়ী আবাস ভূমি থেকে বঞ্চিত। আদিবাসী জনগোষ্ঠী প্রতিনিয়ত শোষন, বঞ্চনা, বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।

তারা বলেন, আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে ভাষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভাষা শুধু যোগাযোগ, শিক্ষা বা সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার বাহন হিসেবেই কাজ করে না, এটি ব্যক্তির স্বকীয় পরিচয়ের অন্যতম বাহন। সাংস্কৃতিক ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অন্যতম স্মারক। বর্তমান বিশ্বে ৬ হাজার ৭শ এর কাছাকাছি ভাষার অস্তিত্বের কথা জানা যায়, যার প্রায় ৪০ শতাংশ বিলুপ্তির পথে। আর এর অধিকাংশই আদিবাসী ভাষা। ভাষার এই বিলুপ্তির সম্ভাবনাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিয়ে এ ব্যাপারে জাতি-রাষ্ট্রসমূহকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০১৬ সালে জাতিসংঘ ২০১৯ সালকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা বর্ষ’ হিসেবে ঘোষণা দেয়। নানাবিধ কারণে আদিবাসী জনগোষ্ঠী ও তাদের মাতৃভাষা আজ হুমকির মুখে। বাংলাদেশে অনেক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষা হারিয়ে গেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে বসবাসরত আদিবাসীদের মধ্যে ৩৫টি ভাষা প্রচলিত আছে।

সভায় বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী ফোরাম এবং সনাক’র মাধ্যমে কর্তৃপক্ষের কাছে কিছু দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিসমূহ হচ্ছে-

১. সকল আদিবাসী শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষা লাভের অধিকার নিশ্চিত করতে তাদের মাতৃভাষায় পাঠ্যবই প্রণয়ন ও পাঠদানের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে;
২. সমতলের আদিবাসীদের ভূমি সমস্যা সমাধানে পৃথক ভূমি কমিশন গঠন এবং তাদের জমির মালিকানা সমস্যার কার্যকর নিষ্পত্তি করতে হবে;
৩. প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে ‘উপজাতি’ কোটা পুবর্বহাল করতে হবে;
৪. দুর্গম অঞ্চলে বসবাসরত আদিবাসীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তাসহ মৌলিক সেবাসমূহ নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোতে পৃথক তদারকি ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে;
৫. আদিবাসীদের শিক্ষা, ভাষা, কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণে জাতীয় বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।

সভায় অন্যদের মাঝে বক্তব্য দেন, বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী ফোরামের সহ-সভাপতি আনন্দ মোহন সিংহ, বাংলাদেশ চা জনগোষ্ঠী আদিবাসী ফোরামের সভাপতি পরিমল সিং বাড়াইক, বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং বাংলাদেশ দলিত সম্প্রদায়ের সভাপতি সুশীল কুমার মৃধা, সনাক সদস্য অয়ন চৌধুরী প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে খাঁসিয়া, মণিপুরি, ত্রিপুরা, মুন্ডা ও চা জনগোষ্টি সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ, সনাক, স্বজন, ইয়েস, ইয়েস ফ্রেন্ডস, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, এনজিও প্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ।