এই সবুজ গম্বুজের নিচেই রাসূলুল্লাহ (সা.) এর রওজা

প্রকাশিত: ৮:৩৮ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৫, ২০১৯
ফাইল ছবি

ধর্ম ডেস্ক: মসজিদে নববীর সবাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ স্থান হলো রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর রওজা মোবারক। উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.)-এর হুজরার (কামরা) মধ্যে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পবিত্র রওজা মোবারক অবস্থিত।

হজ ও ওমরা পালনকারীদের মদিনা যাওয়ার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো- নবী করিম (সা.)-এর রওজা মোবারক জিয়ারত করা, রওজায় সালাম পেশ করা।

রাসূল (সা.) এর রওজার পাশে ইসলামের প্রথম খলিফা হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) ও ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর কবর। পাশে আরেকটি কবরের জায়গা খালি। এখানে হজরত ঈসা (আ.)-এর কবর হবে।

হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে আমার রওজা জিয়ারত করলো, তার জন্য আমার সুপারিশ ওয়াজিব হয়ে গেলো।’ -সহিহ মুসলিম

রাসূলুল্লাহ (সা.) আরো বলেন, ‘যে হজ করলো কিন্তু আমার রওজা জিয়ারত করলো না; সে আমার প্রতি জুলুম করলো।’ -সুনানে তিরমিজি

হাজিদের মদিনায় প্রবেশ করার মুহূর্তগুলো স্বপ্নের মতো। মসজিদে নববীর কাছাকাছি এলে হাজিদের প্রাণচাঞ্চল্য বেড়ে যায়। তাদের অস্থির চোখগুলো খুঁজতে থাকে সাদা মিনার আর একটি সবুজ গম্বুজ। যে গম্বুজের নিচে শায়িত আছেন বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

সবুজ গম্বুজ দেখার প্রাণান্তকর চেষ্টারত হাজিদের দেখলে মনে হয়, এই বুঝি তারা তাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ কিছু অর্জন করতে যাচ্ছে। মুখে দরুদ আর চোখের কোন বেয়ে বেরিয়ে আসা অশ্রু দৃষ্টিকে ঝাপসা করে দিলেও, হৃদয়ের চোখে অমলিন হয়ে গেঁথে থাকা সবুজ গম্বুজ ঠিকই দেখে নেন এক ঝলক।

রাজা-বাদশা ও উজির-নাজির থেকে শুরু করে, হাজারো অলি-আউলিয়া, গাউস-কুতুব এই গম্বুজ দেখে চোখ ভিজিয়েছেন। এ গম্বুজকে ঘিরে রচিত হয়েছে অসংখ্য কবিতা। সেই গম্বুজ কাছে থেকে দেখার অনুভূতি লিখে বুঝানোর মতো না।

হাজির জন্য মদিনা শরিফ জিয়ারত করা সুন্নত। অনেকে ওয়াজিবও বলে থাকেন। এ কারণে হজপালনের আগে কিংবা পরে হাজিরা মদিনা শরিফ আসেন। মদিনায় অবস্থানকালে হাজিদের প্রথম এবং প্রধান কর্তব্য হচ্ছে, মসজিদে নববিতে হাজিরা দেয়া এবং সেখানে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা।

মসজিদে নববিতে এক রাকাত নামাজের সওয়াব পঞ্চাশ হাজার রাকাত নামাজের সমান। এছাড়া মসজিদে নববীতে বিরতিহীনভাবে ৪০ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায়ের আলাদা ফজিলত রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার মসজিদে চল্লিশ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেছে আর কোনো নামাজ কাজা করেনি, সে নিফাক (মোনাফিকি) আর দোজখের আজাব থেকে নাজাত পাবে।’

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর রওজা শরিফ জিয়ারতের ফজিলত প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ওফাতের পর তার রওজা মোবারক জিয়ারতে করলো, সে যেন হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) কে জীবদ্দশায় দর্শন করলো।’

মসজিদে নববিতে প্রবেশের অনেকগুলো দরজা রয়েছে। তন্মধ্যে পশ্চিম পাশে রাসূলের রওজা জিয়ারতের জন্য যে দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে হয়, ওই দরজাকে ‘বাবুস সালাম’ (এক নম্বর গেট) বলা হয়। বাবুস সালাম দিয়ে প্রবেশ করে রাসূলের রওজায় সালাম শেষে ‘বাবুল বাকি’ দিয়ে বের হতে হয়।

মদিনায় জিয়ারতে হাজিদের জন্য সৌভাগ্যের বিষয়। মদিনায় এসে দুনিয়ায় জীবিত থাকতে জান্নাতে ভ্রমণের সুযোগ মেলে। কারণ নবী করিম (সা.)-এর রওজা শরিফ এবং এর থেকে পশ্চিম দিকে রাসূলে করিম (সা.)-এর মিম্বর পর্যন্ত স্বল্প পরিসরের স্থানটুকুকে রিয়াজুল জান্নাত বা বেহেশতের বাগিচা বলা হয়। এটি দুনিয়াতে একমাত্র জান্নাতের অংশ। এই স্থানে স্বতন্ত্র রঙয়ের কার্পেট বিছানো।

এই স্থানটুকু সম্পর্কে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমার রওজা ও মিম্বরের মধ্যবর্তী স্থানে বেহেশতের একটি বাগিচা বিদ্যমান।’ এখানে প্রবেশ করা মানে জান্নাতে প্রবেশ করা।

দুনিয়ার সব কবরের মধ্যে সবোর্ত্তম ও সবচেয়ে বেশি জিয়ারতের উপযুক্ত স্থান হলো- রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর রওজা মোবারক। তাই এর উদ্দেশে সফর করা উত্তম।

মসজিদে নববীতে একসঙ্গে প্রায় সাড়ে চার লাখ মুসল্লি একত্রে নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদে নববীতে মহিলাদের জন্য নামাজের স্থান সম্পূর্ণ আলাদা।