
কমলগঞ্জ প্রতিনিধি: বর্তমানে করোনা মোকাবিলায় চলমান লকডাউনে করোনায় আক্রান্তের ভয়ে যখন অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি জনগণের পাশে না দাঁড়িয়ে স্বঘোষিত হোমকোয়ারেন্টাইনে অবস্থান করছেন। ঠিক সেই সময়ে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাতদিন কর্মহীন অনাহারে থাকা জনগণের ঘরে ঘরে ছুটে যাচ্ছেন এক অপ্রতিরোধ্য করোনা যোদ্ধা কমলগঞ্জ পৌর মেয়র জুয়েল আহমেদ।
সাম্প্রতিক সময়ে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়,
পৌরসভার আনাচেকানাচে মৃত্যুর ভয়ের উপেক্ষা না করে ত্রাণ নিয়ে নিজেই ছুটে যাচ্ছেন পৌর মেয়র ও তার পৌর টিম। সরকারি ও নিজস্ব তহবিল, কাউন্সিলরবৃন্দ, প্রবাসীবৃন্দ ও সমাজের বিত্তবানদের সমন্নয়ে গঠিত তহবিল থেকে প্রত্যেক ওয়ার্ডে হতদরিদ্র ও অর্ধাহারে, অনাহারে থাকা পরিবারের নিকট নগদ অর্থ ও খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন। করোনা বিস্তার রোধে অগ্রণী ভূমিকা রাখার জন্য পুলিশ ও সাংবাদিকদের পিপিই প্রদান করছেন।
পৌর মেয়র জুয়েল আহমেদ জানান, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ১০০০ পরিবারের জন্য ত্রাণ প্যাকেট বরাদ্ধ পেলেও পৌরসভায় মোট ৪৫০০ পরিবারের বসবাস। তাই তিনি নিজস্ব তহবিল ও কাউন্সিলরবৃন্দ, সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিবর্গ, প্রবাসী রেমিটেন্স যোদ্ধাদের মাধ্যমে ত্রাণ তহবিল গঠন করে প্রায় আরো ৯০০০ প্যাকেট ত্রাণ হতদরিদ্র পরিবারের মাঝে বিতরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
এছাড়াও ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে প্রত্যেক ওয়ার্ডের ঘরে ঘরে গিয়ে নগদ অর্থ প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এই সাহায্য চলমান থাকবে সমস্যা নিরসন না হওয়া পর্যন্ত।
উল্লেখ্য আরো জানা যায়, মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ পৌরসভার যাত্রা পথটি এতো সুগম ছিলো না। অনুন্নত তকমা গায়ে নিয়েই পৌরসভাটির যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৯ সালে। আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত ৬ বারের সংসদ সদস্য সাবেক চিফ হুইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা উপাধ্যক্ষ মো. আবদুস শহীদ এম.পি কমলগঞ্জ পৌরসভা প্রতিষ্ঠা করলেও প্রথম নির্বাচনেই আওয়ামীলীগ প্রার্থীর ভরাডুবি হয়। তারপর আরো দুইবার আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থীরা বিএনপি মনোনীত প্রার্থীদের নিকট ধরাশায়ী হয়। ২০১৫ সালের ৪র্থ পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী হতে অনেকে আগ্রহী হলেও তৎকালীন জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ এম.পি তৎকালীন পৌর যুবলীগ সভাপতি, বিশিষ্ট সমাজসেবক, সিলেট বিভাগের শ্রেষ্ঠ বিদ্যোৎসাহী সমাজকর্মী, সাবেক ছাত্রনেতা, বর্তমানে উপজেলা যুবলীগ আহ্বায়ক জুয়েল আহমেদকে প্রার্থী হিসেবে মনোয়ন করেন।
২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর কমলগঞ্জ পৌর নির্বাচনে নৌকা প্রতিক নিয়ে ব্যক্তি জুয়েল আহমেদ বিএনপি অধ্যুষিত পৌরসভায় নিজ মেধা, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতায় জনগণের মনে জায়গা করে নিয়ে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করেন।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ১৭ বছর পর কমলগঞ্জ পৌরসভার ইতিহাসে প্রথম আওয়ামীলীগ মনোনীত মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন জুয়েল আহমেদ। মেয়র পদে আসীন হওয়ার পর ক্রমশ বদলাতে থাকে পৌর নাগরিক জীবন ব্যবস্থা।
নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি তেমন না থাকলেও সাড়ে ৪ বছরে এক অকল্পনীয় সাফল্য অর্জন করেন।
একটি আধুনিক ও আদর্শ পৌরসভা গড়ে তুলতে ইতিমধ্যেই রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট, ড্রেন, স্যানিটেশন, সড়কবাতিসহ নানা উন্নয়নমূলক কাজ সম্পন্ন করেছেন।
তার সময়েই পৌরবাসী একটি দুর্নীতিমুক্ত, আধুনিক, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পৌরসভা উপহার পেয়েছেন। ইতিমধ্যেই তিনি পৌরসভাকে ‘গ’ শ্রেণী থেকে ‘খ’ শ্রেণীতে উন্নীত করেছেন।
পৌরসভার অধীনস্থ রাস্তা ও ড্রেনেজ সমস্যা দূরীকরণের লক্ষ্যে পুরনো রাস্তাগুলো নতুন করে সংস্কার করেছেন,আরও নতুন রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা করেছেন। জনদূর্ভোগ নিরসনে পৌর এলাকায় প্রায় সবকটি ওয়ার্ডেই পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেন তৈরি করা হয়েছে।
প্রধান প্রধান সড়কগুলোয় লাইটপোস্ট স্থাপনসহ শতভাগ বিদ্যুতায়িত করার কাজ সম্পন্ন করেছেন। এছাড়াও ২টি মসজিদ, ২টি মন্দির,২টি শশ্মানঘাট ও ১টি গোরস্তান সহ ধলাই নদীর উপর ১টি ব্যয়বহুল ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে এবং বয়স্ক,বিধবা,প্রতিবন্ধী ও মাতৃত্বকালীন ভাতাদি পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রদান করা হচ্ছে। এই সাড়ে চার বছরে চার হাজার কম্বল ও সরকারি বরাদ্ধের ৪০০ টন চাল জনগণের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে যা অতীতের ১৭ বছরের রেকর্ডে কোন মেয়রের পক্ষে সম্ভব হইনি।
এছাড়াও পৌরসভা ভবন সৌন্দর্যবর্ধন,নাগরিক মর্যাদা বৃদ্ধিতে মেয়রের সাথে খোলামেলা স্বাচ্ছন্দ্যে কথা বলতে সরকারি ও ব্যক্তিগত দুইটি অফিস করা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র জুয়েল আহমেদ বলেন, পৌরসভার নাগরিকরা এখনো অনেক বিষয়ে নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত,১৭ বছরের এই জঞ্জাল ৫ বছরে সমাধান করা খুবই কঠিন কাজ। আমার প্রিয় পৌরবাসীর নিকট আমার তেমন কোন প্রতিশ্রুতি না থাকলেও ইতিমধ্যে অধিকাংশ কাজ আমি সমাপ্ত করতে সক্ষম হয়েছি।
অসমাপ্ত সকল কাজগুলো পর্যায়ক্রমে আমি সমাপ্ত করার কাজ অব্যাহত ভাবে চালিয়ে যাচ্ছি। পৌরসভার নাগরিকদের তাদের প্রাপ্ত সম্মান ও মর্যাদা দেওয়ার জন্য আমি সর্বদা বদ্ধপরিকর। একটি আধুনিক ও আদর্শ পৌরসভা বিনির্মাণে আমি তাদের সহযোগিতা ও দোয়া চাই।
সূত্র: দৈনিক নয়া যুগান্তর…