ডেস্ক রিপোর্ট: কারাবন্দি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে ভালো এবং তিনি রোজা রাখছেন বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) থেকে তাকে ছেড়ে দিলে কেরানীগঞ্জ কারাগারে নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
মঙ্গলবার (১৪ মে) সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান। খালেদা জিয়া শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি রয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আগে ইনসুলিন নিতেন না, সে জন্য ডায়াবেটিস কন্ট্রোলে ছিল না। এখন উনি (খালেদা জিয়া) ইনসুলিন নিচ্ছেন, এখন ওনার শরীর মোটামুটি ভালো আছে, আমরা যেটুকু খবর পেয়েছি। আমরা খবর পেয়েছি উনি আগের চেয়ে অনেক সুস্থ।’
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘যে ধরনের রোগে তিনি ভুগছেন, সেগুলো অনেক দিনের পুরনো রোগ। যেমন- আর্থাইটিস ও ডায়াবেটিস। সেগুলো তার পুরনো রোগ, সেগুলো তো চলছেই। সেগুলো চলছে বলেই তিনি হাসপাতালে আছেন।’
কেরানীগঞ্জে বিশেষ আদালত স্থানান্তরিত হয়েছে, খালেদা জিয়া সুস্থ হলে তাকে কেরানীগঞ্জ কারাগারে নেয়া হবে কি না -এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারকে আদালতে রূপান্তর করে সেখানে খালেদা জিয়াকে রেখেছিলাম। আমরা সেটাকে জাদুঘরে পরিণত করছি, প্রোগ্রাম নিয়ে নিয়েছি। অনেক অংশই ভেঙে ফেলা হবে। কাজেই ওনাকে আর ওখানে রাখা যাবে না। কেরানীগঞ্জে একটি আধুনিক কারাগার তৈরি করেছি। সেখানে মহিলাদের অংশটা করতে একটু সময় লেগেছিল। অন্যান্য কাজও বাকি ছিল। সেগুলো করতে একটু সময় লেগেছে। খালেদা জিয়াকে যদি হাসপাতাল থেকে ডিসচার্জ করা হয় তাহলে হয়তো তাকে ওখানে নেয়া হবে।’
ভালো আছেন বলছেন, তাহলে হাসপাতাল থেকে বেগম জিয়া কবে ছাড়া পাবেন -জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি মিন করেছি যে, তার অস্বাভাবিক কিছু হয়নি। কারাগার থেকে আরেকটু ভালো সেবা যাতে পান সে জন্য হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ বলেছেন, ‘কেরানীগঞ্জ কারাগারের নির্মাণ কাজ এখনও শেষ হয়নি। নির্মাণাধীন একটি কারাগারে খালেদা জিয়াকে স্থানান্তরের সরকারি চিন্তাভাবনা মনুষ্যত্বহীনের কাজ। সরকার তার জীবনবিনাশের ষড়যন্ত্র করছে।’
রিজভীর এই বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মৃদু হেসে বলেন, ‘কারাগারে নিয়ে জীবন বিপন্ন করব এই ধরনের প্রসঙ্গই আসে না, প্রশ্নই আসে না। এটাকে (কেরানীগঞ্জ কারাগার) যথোপযুক্ত করার জন্যই আমরা কয়েকদিন দেরি করেছিলাম। আমরা এখন উপযুক্ত মনে করছি সে জন্য তাকে ট্রান্সফার করার জন্য প্রক্রিয়াগুলো সমাধা করে চলছি। জীবন বিপন্ন করার প্রশ্নই আসে না। জেল কোড অনুযায়ী, যত ধরনের সুযোগ-সুবিধা আছে আমরা তাকে দিয়েছি।’
খালেদা জিয়াকে কেরানীগঞ্জে কীভাবে রাখা হবে -জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘জেল কোড অনুযায়ী যতখানি ব্যবস্থা থাকা দরকার, ঠিক সেই রকম ব্যবস্থাই হবে।’
তারেক জিয়াকে দেশে আনার জন্য সরকারের অবস্থান কী -এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তারেক জিয়াকে দেশে আনার জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তাকে আনার যে প্রচেষ্টা চলছে আমরা তাকে আনতে পারব। সবকিছু পালন করেই আমরা তাকে আনার চেষ্টা করছি।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন দেশে নারী-শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণের সংখ্যা মহামারী আকারে বেড়ে গেছে। আপনি কী মনে করেন দ্রুত শাস্তি না হওয়ায় মানুষ এ ধরনের অপরাধে লিপ্ত হচ্ছে -এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি আপনার সঙ্গে একমত নই। আপনি সারা পৃথিবীর জরিপ দেখেছেন? সেখানে কী আমরা মহামারী আকারে মনে হয়? জরিপ নিয়ে দেখবেন, কোন দেশে কতটি রয়েছে, আমাদের দেশে কত।’
তিনি বলেন, ‘যে কয়টা ঘটনা ঘটেছে, কিশোরগঞ্জ ও অন্যান্য জায়গায় সবগুলো আসামিকে শনাক্ত করা হয়েছে, ধরা হয়েছে, ১৬৪ ধারা হয়েছে। আমাদের কাজটা আমরা করে দিচ্ছি। তারপর বিচারে বিভাগের কাজ বিচার বিভাগ করেন। সেখানে আমাদের কিছু করণীয় নেই।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘পুলিশের যে তদন্ত ও ব্যবস্থা নেয়ার সেটা কিন্তু পুলিশ করছে। এই ধরনের ঘটনা যে কোনো দেশে একদম নেই তা আপনারা বলতে পারবেন না। সব দেশেই আছে, কম বেশি আছে। আমাদের দেশে একেবারে মহামারী আকার ধারণ করেছে আমরা মনে হয় এই উক্তিটি সঠিক নয়।’
রাজধানীর উত্তরখানে মা ও দুই সন্তানের মৃত্যু, আত্মহত্যা না হত্যা এটা নিয়ে ধোঁয়াশা আছে -এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটার তদন্ত চলছে। কোনো ধোঁয়াশা থাকবে না, ক্লিয়ার হয়ে যাবে।’
এর আগে নব নির্বাচিত বিজিএমইএ প্রেসিডেন্ট ও পরিচালকদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ঈদের আগে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধের বিষয়ে বিজিএমইএ নেতাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা -জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ঈদের আগে অনেকে বেতন দিতে পারে না। প্রতি বছরই সমস্যা হয়, বিজিএমইএ সমাধান করে, এগুলো নিয়ে তারা আগামী ১৯ তারিখে আমাদের সঙ্গে কথা বলবে।