ডেস্ক রিপোর্ট: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় হলে কান ঢেকে প্রার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরকে (ডিপিই) এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ডিপিই থেকে দেশের সব জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে এ নির্দেশনা পাঠানো হচ্ছে বলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে।
গত ২৪ মে প্রাথমিকে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের প্রথম ধাপের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ৩১ মে দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা হওয়ার কথা রয়েছে। এ ধাপে দেশের ২৫ জেলায় প্রায় ১৪ লাখ প্রার্থী অংশগ্রহণ করবেন।
প্রথম ধাপের পরীক্ষায় সাতক্ষীরায় প্রশ্নফাঁস হওয়ায় বিপাকে পড়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরবর্তীতে যাতে আর প্রশ্নফাঁসের ঘটনা না ঘটে সে জন্য গোয়েন্দা সংস্থার তৎপরতা বাড়ানোসহ আরও বেশি কৌশলী হওয়ার কথা বলা হয়েছে।
৩১ মে দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষাও প্রশ্নফাঁসমুক্ত ও সুষ্ঠুভাবে গ্রহণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। পরীক্ষাটি একাধিক প্রশ্নপত্রে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কানে কাপড় জড়িয়ে পরীক্ষা নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। এছাড়া কারিগরি ও প্রযুক্তিগত আরও বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন সোমবার বলেন, শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা আয়োজনে আমরা আরও কঠোর ও কৌশল অবলম্বন করব। কোনো প্রার্থীকে কেন্দ্রের মধ্যে কানে কাপড় জড়িয়ে ঢুকতে না দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি জেলা পর্যায়ে প্রশ্নসেট আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, বিগত পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের ঘটনাটি কেবল সাতক্ষীরায় ঘটেছে। কিন্তু সেখানে প্রশ্ন ঢাকা থেকে গেছে বলে দাবি করছেন গ্রেফতারকৃতরা। আমরা জানতে চাই, ঢাকার সেই ব্যক্তিটা কে? আমাদের মূল কাজ হচ্ছে মূলহোতা খুঁজে বের করা। জানতে চাই, সরষের মধ্যেই ভূত আছে কি-না? এটা বের করতে কাজ করার জন্য র্যাব, এনএসআইকে আমরা অনুরোধ জানিয়েছি। পাশাপাশি পরবর্তী পরীক্ষাগুলো সুষ্ঠুভাবে নেয়ার পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। পরীক্ষাটি আমরা ‘জিরো রিস্কে’ (ঝুঁকিমুক্ত) নিয়ে যেতে চাই।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, পরীক্ষা ও প্রশ্নফাঁসের ঘটনার পর প্রথম কর্মদিবসে গত রোববার একাধিক বৈঠক হয়েছে। এর মধ্যে একটি হয়েছে বুয়েটে। খোদ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব বুয়েটের সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি প্রশ্নপত্র পাঠানোর প্রযুক্তির বিষয়ে খোঁজখবর নেন। এছাড়া ওই কাজে কে বা কারা জড়িত, সেটা জানতে চান। পাশাপাশি পরবর্তী পরীক্ষার প্রশ্ন আরও সুরক্ষিত করার প্রযুক্তি সম্পর্কেও আলোচনা করেন।
সচিব আরও বলেন, ৩১ মে’র পরীক্ষা সামনে রেখে ২৬ জেলার ডিসিকে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তাতে জেলার গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে সর্বোচ্চ তৎপর রাখতে বলা হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের আরেকটি সূত্র জানায়, প্রশ্নফাঁসের ঘটনার পর প্রশ্ন প্রণয়ন ও বিতরণ কাজের কমিটি পুনর্গঠনের চিন্তাভাবনা চলছে। এ কাজে ইতিবাচক ভাবমূর্তিসম্পন্ন কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে জানা গেছে।
পাশাপাশি কারিগরি ও প্রযুক্তিগত কাজে কোনো শিথিলতা বা দুর্বলতা আছে কি-না, তা চিহ্নিত করার পাশাপাশি ব্যবস্থা নিতে বুয়েটকে অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়া পরীক্ষার কেন্দ্রে প্রশ্ন ছাপার কাজে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যাপারে আরও সতর্কতা গ্রহণ, পরীক্ষার্থীদের নজরদারি, নকল রোধে বোরখা পরিহিত পরীক্ষার্থীদের কান খোলা রাখার ব্যবস্থাসহ আরও বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ২৪ মে অনুষ্ঠিত নিয়োগ পরীক্ষা ১১ জেলায় অনুষ্ঠিত হয়। ওইদিনের পরীক্ষায় সাতক্ষীরায় প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে ২৯ জনকে আটক করা হয়। পরে আট অভিভাবককে ছেড়ে দেয়া হয়। প্রশ্নফাঁসে জড়িত স্থানীয় পাঁচ অপরাধীসহ ২১ জনকে তাৎক্ষণিক বিচারে দুই বছর করে দণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। এছাড়া ইলেকট্রিক ডিভাইসসহ পাবনায় বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়। পরীক্ষায় অনিয়মে সেখানে আটজন আটক এবং চারজনকে বহিষ্কার করা হয়। নোয়াখালীতেও একজনকে আটক এবং নকল সরবরাহের অভিযোগে পটুয়াখালীতে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে কারাদণ্ড দেয়া হয়।
প্রসঙ্গত, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন এ নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও বিতরণে মন্ত্রণালয়ের ১৪ সদস্যের কমিটি কাজ করে। ২৪ মে’র পরীক্ষা একটিমাত্র প্রশ্নে নেয়া হয়। তবে ৩১ মে’র পরীক্ষা একাধিক প্রশ্নপত্রে নেয়া হবে। সারাদেশে তিন পার্বত্য জেলা বাদে ৬১ জেলার ২৪ লাখ এক হাজার ৯১৯ প্রার্থী প্রায় ১২ হাজার পদের বিপরীতে এ পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। চার ধাপের পরীক্ষার তৃতীয় ধাপেরটি ২১ জুন এবং চতুর্থ ধাপেরটি ২৮ জুন অনুষ্ঠিত হবে।