বদলে যাচ্ছে রেলসেবা, হচ্ছে আধুনিকায়ন

প্রকাশিত: ৫:৪২ অপরাহ্ণ, জুন ২৬, ২০২০
ফাইল ছবি

ধলাই ডেস্ক: ট্রেন চলেছে ট্রেন চলেছে ট্রেনের বাড়ি কই’—শৈশবের এই মজার ছড়া এক যুগ আগেও মনে ধরত না। কেননা সেসময় ট্রেন শব্দটি শুনলেই একরাশ বিরক্তি এসে মনে ভিড় করত। ওই সময় রেল যাতায়াতব্যবস্থায় ভোগান্তির যেন অন্ত ছিল না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রেনের অপেক্ষায় প্লাটফর্মে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা, দীর্ঘসময় অপেক্ষার পরও বাদুড়ঝোলা হয়ে গন্তব্যে পৌঁছা, একহাত সিট পেতে ব্ল্যাকারদের পকেটে অতিরিক্ত পয়সা গোনা, যথাসময়ে কাউন্টার না খোলা এবং আচমকা ভাড়া দ্বিগুণ হওয়ায় বিনা টিকেটে রেলভ্রমণ, তারপর কমলাপুর স্টেশনে পুলিশের হাতে তার খেসারত দেয়াসহ যাত্রীদের নানান ঝামেলার সম্মুখীন হতে হত।

এসব ঘটনার শুরু হয় ১৯৯১ সাল থেকে। দীর্ঘদিন বিনিয়োগ বঞ্চিত রেলখাত একেবারেই ধসে পড়ে তখন। ছাঁটাই করা হয় ১০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী। নানা অব্যবস্থাপনায় কমতে থাকে রেল লাইন, বন্ধ হয়ে যায় কয়েকশ’ স্টেশন। বগি আর ইঞ্জিনের অভাবে বন্ধ হয়ে যায় বিভিন্ন রুটে ট্রেন চলাচল। এরপর বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে রেলকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নেয়া হয়। রেলপথ, স্টেশন বন্ধ করে দেয়াসহ হাজার হাজার শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়। এরপর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর রেলে একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন শুরু হয়।

মৃতপ্রায় রেলকে বাঁচাতে ২০১১ সালে আলাদা মন্ত্রণালয় গঠন করে আওয়ামী লীগ সরকার। নেয়া হয় দু’দশকের মহাপরিকল্পনা। ৫ বছর করে ৪ ভাগে বিভক্ত সেই মহাপরিকল্পনায় শতাধিক প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ।

রেলসেবা বাড়াতে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের শেষ নেই। কেননা দেশের প্রতিটি জেলায় রেলসেবা পৌঁছে দিতে উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। প্রায় ৬ লাখ কোটি টাকা সম্ভাব্য ব্যয় ধরে সেসব পরিকল্পনার বাস্তবায়নও শুরু করা হয়েছে। জানা গেছে, ২০ বছর মেয়াদি এই মহাপরিকল্পনায় দেশব্যাপী রেলের আধুনিকায়নই হবে না, চলবে দ্রুত গতির বুলেট ট্রেন। ১০ বছর আগে নেয়া মাস্টার প্ল্যানের ধারাবাহিকতায় বেড়েছে নতুন রেল লাইন, ইঞ্জিনসহ পণ্যবাহী ওয়াগন।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গত ১০ বছরে নির্মিত হয়েছে ৩৮১ কিলোমিটার নতুন রেলপথ, ৩৪৭টি রেল সেতু। কেনা হয়েছে ১৪০টি ইঞ্জিন, প্রায় ৪০০টি যাত্রীবাহী ক্যারেজ। চালু হয়েছে ১৩৫টি নতুন ট্রেন। নিয়োগ দেয়া হয়েছে ১৪ হাজার নতুন কর্মী।

এ মুহূর্তে চলমান ৩৬টি প্রকল্প যার সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা। নতুন করে নির্মাণ করা হচ্ছে ১ হাজার ২৬৮ কিলোমিটার রেল লাইন, ৩৫৮টি রেল সেতু, কেনা হবে ১৪০টি ইঞ্জিন, ৬ শতাধিক বগি ও ১০০০ হাজার পণ্যবাহী ওয়াগন।

রেলপথ মন্ত্রণালয় গঠনের পর ২০১৩-১৪ অর্থবছরে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। আর এ খাতে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১৬ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা। রাজধানীর যানজটমুক্ত করতে ঢাকার কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে দুটি অত্যাধুনিক ট্রানজিট হাব নির্মাণ প্রকল্পের সমীক্ষার কাজ চলছে। মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী ২০৪৫ সালের মধ্যে রেলওয়েতে আরো ৬০০ ইঞ্জিন, ছয় হাজার যাত্রীবাহী কোচ ও সাত হাজার মালবাহী ওয়াগন কেনা হবে।

নির্মাণ করা হবে বঙ্গবন্ধু রেল সেতু, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ লাইনের মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলে রেলের সম্প্রসারণ ঘটার পাশাপাশি ট্রেন চলবে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার ও কক্সবাজার থেকে মিয়ানমার সীমান্ত পর্যন্ত।

সম্প্রতি ৩০০ কিলোমিটার গতির ট্রেন পরিচালনা পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এরইমধ্যে রাজধানীতে পাতাল রেল নির্মাণের অনুমোদন হয়ে গেছে। প্রকল্প নেয়া হয়েছে ট্রান্স এশিয়া রেল কমিউনিকেশনের, যার আওতায় বাংলাদেশ থেকে রেল পথে যাওয়া যাবে ভারত-মিয়ানমার-চীন ভুটানসহ এশিয়ার কয়েকটি দেশে।

এছাড়া ‘রূপকল্প-২০২১’ বাস্তবায়নে এ পর্যন্ত ৩৩০ দশমিক ১৫ কিলোমিটার নতুন রেললাইন স্থাপন করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় গঠন করা না হলে রেলওয়েতে একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন কখনো সম্ভব হতো না জানিয়ে রেলওয়ে মহাপরিচালক কাজী রফিকুল আলম বলেন, রেলপথ মন্ত্রণালয় আমাদের ভাগ্য খুলে দিয়েছে। বিশেষ করে মন্ত্রণালয় গঠনের পর থেকেই বন্ধ থাকা রেললাইন, স্টেশন চালু করাসহ নতুন ট্রেন ও লাইন নির্মাণ কাজ শুরু হয়। রেলওয়েতে আমূল পরিবর্তন আনতে যে মহাপরিকল্পনা নেয়া হয়েছে তা বাস্তবায়ন হলে রেল হবে উন্নত দেশের রেলওয়ের মতো।

সূত্র: ডেইলী বাংলাদেশ…