ধলাই ডেস্ক: মুখে টর্চলাইটের আলো পড়ায় এক ট্রেন পরিচালককে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা থানা পুলিশের তিন সদস্য। সোমবার রাত সাড়ে তিনটার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের কসবা উপজেলার ইমামবাড়ি রেলওয়ে স্টেশনে এ ঘটনা ঘটে।
আহত ট্রেন পরিচালক মহিউদ্দিনের বাড়ি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গুণবতী গ্রামে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত কসবা থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) কামাল হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে অভিযুক্ত বাকি দুই পুলিশ সদস্যদের নাম জানা যায়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা নোয়াখালী এক্সপ্রেস ট্রেনটি (১২ ডাউন) ক্রসিংয়ের কারণে সোমবার রাত তিনটা ২০ মিনিটের দিকে ইমামবাড়ি রেলওয়ে স্টেশনে দাঁড়ায়। ট্রেন থামার পর পরিচালক মহিউদ্দিন রেলাইনে দাঁড়ানো কয়েকজন পুলিশ সদস্যের দিকে টর্চলাইটের আলো ছোড়েন।
এ সময় চোখে-মুখে টর্চলাইটের আলো পড়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে কসবা থানা পুলিশের এসআইস কামাল হোসেনের নেতৃত্বে পোশাক পরা তিনজন পুলিশ সদস্য ও সাদা পোশাকের আরেকজন ব্যক্তি এসে মহিউদ্দিনকে মারধর করেন। একপর্যায়ে তাকে ট্রেন থেকে নামিয়ে স্টেশন মাস্টারের রুমের সামনে নিয়ে আবার মারধর করেন। মারধরের কারণে অজ্ঞান হয়ে যান মহিউদ্দিন। বর্তমানে মহিউদ্দিন কুমিল্লার একটি হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
আহত মহিউদ্দিন বলেন, ট্রেনের পেছনের একটি বগিতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে সরাসরি বুক করা রেলওয়ের কিছু মালামাল ছিল। অনেক সময় তালা ভেঙে মালগুলো ফেলে দেয়া হয়। তাই ট্রেন কোথাও দাঁড়ালেই আমরা এদিক-সেদিক লাইট জ্বালিয়ে দেখি। সেই উদ্দেশ্যে আমি লাইট জ্বালাই। তখন হয়তো কারও চোখে পড়েছে লাইটের আলো। আমি সেটি খেয়াল করিনি। এরই মধ্যে হঠাৎ তিনজন পুলিশ সদস্য আমাকে গালিগালাজ করে বলে লাইট কেন জ্বালিয়েছি। তখন পরিচয় দেয়ার পর আমাকে ট্রেন থেকে নামতে বলে তারা। আমি বলি ট্রেন থেকে নামার নিয়ম নেই, আপনারা আসেন। একপর্যায়ে তারা এসে আমাকে এলোপাতাড়ি মারধর করে ট্রেন থেকে নামানোর চেষ্টা করে। সেই সঙ্গে মারধর করে।
আমার হাতে আঘাত করার পর আমি দুর্বল হয়ে পড়ি। পরে স্টেশন মাস্টারের রুমের সামনে নিয়ে আবার আমাকে মারধর করে তারা। আমার হাত, পা এবং কোমরে বেশি আঘাত করা হয়েছে। এতে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। আমি বাঁচার জন্য মাস্টারসহ সবাইকে ডাকাডাকি করি। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি।
তবে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে কসবা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লোকমান হোসেন বলেন, পুলিশ সদর দফতর থেকে আমাদের কাছে তথ্য দেয়া হয়েছিল ইমামবাড়ি রেলওয়ে স্টেশনের আশপাশের বাড়িগুলোতে বড় ধরনের ডাকাতি হতে পারে। সেজন্য আমাদের চার-পাঁচটি টিম স্টেশন ও আশপাশ এলাকায় অবস্থান নেয়। স্টেশনে থাকা আমাদের পুলিশ সদস্যদের ওপর কিছুক্ষণ পর পর লাইট মারেন মহিউদ্দিন। লাইট মারার কারণ জানতে চাইলে মহিউদ্দিন পুলিশ সদস্যদের গালিগালাজ করেন। পরে তাকে ধরে নিয়ে যেতে চাইলে পরিচয় পাওয়ার পর তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
এ ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মুহাম্মদ আলমগীর হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে অভিযুক্ত এসআই কামাল হোসেনকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কসবা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল করিম।