মে দিবসে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর বাণী

প্রকাশিত: ১২:২৯ পূর্বাহ্ণ, মে ১, ২০১৯

ডেস্ক নিউজ: শ্রমিক-মালিক পরস্পর সুসম্পর্ক বজায় রেখে জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধিতে নিবেদিত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মহান মে দিবস উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতির বাণী

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থসংরক্ষণ ও সার্বিক জীবনমান উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন, মালিকপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সমন্বিত উদ্যোগ অত্যন্ত জরুরি।

মহান মে দিবস উপলক্ষে দেয়া বাণীতে এ কথা বলেন তিনি।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন দেখেছিলেন উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন,মহান মে দিবসের ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন পূরণে দেশের আপামর মেহনতি ও শ্রমজীবী মানুসকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি।

আবদুল হামিদ মহান মে দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব শ্রমজীবী মানুষকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, তিনি মনে করেন, মে দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক-মালিক ঐক্য গড়ি, উন্নয়নের শপথ করি’অত্যন্ত সময়োপযোগি হয়েছে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, শ্রমজীবী ও মেহনতি মানুষই হচ্ছে দেশের উন্নয়নের প্রধান চালিকাশক্তি। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের মধ্যেই নিহিত রয়েছে দেশের সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন তথা ‘রূপকল্প-২০২১ ও ২০৪১’ বাস্তবায়নে শ্রমজীবী মানুষের ভূমিকা তাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

দেশের ক্রমবর্ধমান উন্নয়নের সমান্তরালে বাড়ছে শিল্প-প্রতিষ্ঠান ও কলকারখানার সংখ্যা এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছে বিপুল সংখ্যক শ্রমজীবী মানুষ। দেশের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এসব শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য মজুরি প্রদান, দক্ষতাবৃদ্ধি, সুন্দর ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ, পেশাগত নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ সার্বিক কল্যাণ সাধন খুবই জরুরি।

রাষ্ট্রপতি বলেন, বর্তমান শ্রমিকবান্ধব সরকার এ লক্ষ্যে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ, শিশুশ্রম বন্ধ, নারী শ্রমিক ও কর্মচারীদের জন্য মাতৃত্বকালীন ছুটির সময় বৃদ্ধি, কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের নিরাপত্তাসহ শ্রমিকের স্বাস্থ্যসম্মত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, মে দিবস কেবল অধিকার আদায়ের দিন নয়, নিজেদের আত্মবিশ্লেষণ ও সম্মিলিতভাবে দেশ গড়ার অঙ্গীকারও বটে। শ্রমিক-মালিক পারস্পরিক সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক শ্রমক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা রক্ষা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে বলেও রাষ্ট্রপতি উল্লেখ করেন।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ মহান মে দিবস-২০১৯ উপলক্ষে গৃহীত সব কর্মসূচির সফলতা কামনা করেন।

প্রধানমন্ত্রীর বাণী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহান মে দিবসের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে শ্রমিক এবং মালিক পরস্পর সুসম্পর্ক বজায় রেখে জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধিতে নিবেদিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

মহান মে দিবস উপলক্ষে এক বাণীতে তিনি এ আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমি আশা করি, মহান মে দিবসের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে শ্রমিক এবং মালিক পরস্পর সুসম্পর্ক বজায় রেখে জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধিতে নিবেদিত হবেন।

শ্রমিক ভাই-বোনসহ সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা জাতির পিতার অসাম্প্রদায়িক, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষত হব, ইনশাআল্লাহ।

বিশ্বের শ্রমজীবী ও মেহনতি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার স্মৃতিবিজড়িত গৌরবোজ্জ্বল ত্যাগের ঐতিহাসিক দিন ১ মে উল্লেখ করে তিনি মহান মে দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব দেশের মেহনতি মানুষকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।

১৮৮৬ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে যে শ্রমিক ভাই-বোনেরা ৮ ঘণ্টা কর্মদিবসের দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে জীবন উৎসর্গ করেছেন প্রধানমন্ত্রী তাদের স্মৃতির প্রতিও গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার জাতির পিতার আদর্শ অনুসরণ করে দেশের শ্রমজীবী মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ও কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। এরই মধ্যে শ্রমঘণ পোশাক শিল্পখাতের শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ৮ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ যুগোপযোগী ও আধুনিকায়ন করে বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৮) প্রণয়ন এবং দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা, ২০১৫ প্রণয়ন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, শ্রমিকদের সামাজিক মর্যাদা, স্বাস্থ্য ও সেইফটি নিশ্চিতকল্পে জাতীয় শ্রমনীতি-২০১২, জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতি-২০১০, জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি নীতিমালা ২০১৩ এবং গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি-২০১৫ প্রণয়ন করা হয়েছে যা বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে স্থিতিশীল শিল্প সম্পর্ক এবং উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে।

সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এবং কার্যক্রম আরো সুদৃঢ় হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শ্রম আইন বাস্তবায়নে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন পরিদফতর এবং শ্রম পরিদফতর-এর সক্ষমতা ও জনবল বৃদ্ধি করে অধিদফতরে উন্নীত করা হয়েছে। শ্রমিক ভাই-বোনদের যেকোন সমস্যা সংক্রান্ত অভিযোগ গ্রহণ, অভিযোগ নিষ্পত্তি ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদানের জন্য সার্বক্ষণিক টোল ফ্রি হেল্পলাইন (১৬৩৫৭) চালু করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, শিল্প কারখানায় বিশেষ করে গার্মেন্টস শিল্পে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যথাযথ পরিদর্শন ও মনিটরিং ব্যবস্থা চলমান রয়েছে। শ্রমজীবী নারীদের কল্যাণে চট্টগ্রামের কালুরঘাটে ও নারায়ণগঞ্জের বন্দরে ১৫৬০ শয্যাবিশিষ্ট শ্রমজীবী মহিলা হোস্টেল নির্মাণ করা হয়েছে। শ্রমিকদের জন্য শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার প্রয়াসের অংশ হিসেবে রাজশাহীতে জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষণা এবং প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট নির্মাণ কাজ এরইমধ্যে শুরু হয়েছে।

এ ছাড়াও দুর্ঘটনা কবলিত শ্রমিক ও দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত শ্রমিকদেরকে এ পর্যন্ত কল্যাণ তহবিল এবং কেন্দ্রীয় তহবিল হতে ৮৩ কোটি ৪০ লাখ ১৭ হাজার ৩৫৫ টাকা এবং শ্রমিকদের মেধাবী সন্তানদেরকে উচ্চ শিক্ষায় তহবিল দুইটি হতে ৪ কোটি ৫৯ লাখ ২০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজীবন শোষিত, বঞ্চিত ও শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছেন। জাতির পিতা সর্বদা বাঙালি জাতি এবং বিশ্বের নির্যাতিত ও মেহনতি মানুষের মুক্তির কথা ভাবতেন– যা প্রতিফলিত হয়েছে তার প্রতিটি কথায় ও কাজে।

শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি ১৯৭২ সালে শ্রমনীতি প্রণয়ন করেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু পরিত্যক্ত কলকারখানা জাতীয়করণ করে শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করার সঙ্গে সঙ্গে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করেছিলেন। ১৯৭৩ সালে আলজিয়ার্সে অনুষ্ঠিত ন্যাম শীর্ষ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তার ভাষণে বলেছিলেন, বিশ্ব আজ দুই ভাগে বিভক্ত, একদিকে শোষক, আর অন্যদিকে শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে।

প্রধানমন্ত্রী মহান মে দিবস ২০১৯-এর সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।