শ্রীমঙ্গলে বিদ্যুৎ এর ৮ ঘন্টার ভেলকিবাজিতে খামারী হলো নিঃশ্বঃ মরলো ১০ হাজার মুরগ
শ্রীমঙ্গল সংবাদদাতা: টানা ৮ ঘন্টা বিদ্যুৎবিহীন ছিলো শ্রীমঙ্গল উপজেলা। বিদ্যুৎ সংকটে পুরো উপজেলা জুড়ে দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়। তাপদাহে উপজেলার প্রায় শতাধিক ক্ষুদ্র পোলট্রি খামারের ১০ হাজারের বেশি মুরগী মরার খবর পাওয়া গেছে। খামারিরা বলেছেন এতে প্রায় ২০ লক্ষাধিক টাকা আর্থিক ক্ষতি হবে। মঙ্গলবার (১৮ জুন) দুপুরে শহরের তাপমাত্রা ছিল ৩৫ডিগ্রি সেলসিয়াস। এসময়ে মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ঘোষনায় চলছিল টানা ৮ ঘন্টা লম্বা লোডশেডিং। এতে দুঃসহ গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন সাধারণ মানুষ। বিদ্যুৎবিহীন অসহনীয় গরমে চরম দুর্ভোগের শিকার হন জনসাধারণ। গরমের কারণে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্ধারিত সময়ের আগে ছুটি দেয়া হয় । দীর্ঘসময় বিদ্যুৎ না থাকায় মিল, শিল্প কারখানার স্বাভাবিক কাজকর্ম বন্ধ থাকে। মার্কেট ও বিপণী বিতানগুলোতে স্বাভাবিক বেচাকেনায় ছেদ পড়ে। প্রখর রোদে নিম্ন আয়ের মানুষ বিশেষ করে রিক্সাচালক ও দিনমজুরদের হাঁপিয়ে উঠতে দেখা গেছে। সোমবার (১৭ জুন) সন্ধ্যায় মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সদর দপ্তর কর্তৃক শুধু শহরে মাইকিং করে মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বেলা ৩ টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকার ঘোষণা দেয়া হয়। তবে মঙ্গলবার সকাল ৮টার কিছুটা পরে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হলেও ঘোষনার ৪৫ মিনিট পরে ৩টা ৪৮ মিনিটে উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হয়। এতে করে মানুষ হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেও উপজেলার কয়েক লাখ গ্রাহক গরমে অসহনীয় ৮ ঘন্টা কাটিয়েছেন। এদিকে, দীর্ঘ ৮ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় বেশ কিছু পোলট্রি খামারে প্রচন্ড গরমে মুরগী মরে যাবার খবর পাওয়া গেছে। উপজেলার আশিদ্রোন ইউনিয়নের তাজুল মিয়ার আসিফ পোলট্রি খামারের ২ লক্ষাধিক টাকা মূল্যের ৮শ’, এই ইউনিয়নের খোসবাশ ওয়াহিদ পোলট্রির ১ কেজি ৮শ’ গ্রাম ওজনের ২শতাধিক, মোহাজিরাবাদ গ্রামের ৩ কেজি ওজনের ২০টি, শিববাড়ী গ্রামের মালিক মো. লিটন মিয়ার পোলট্রি খামারের ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা মূল্যের ৪শ’ ভ‚নবীর ইউনিয়নের শুশীল ঘোষের মালকানাধীন রাজপাড়ার বিসমিল্লাহ পোলট্রি ফার্মের ৫০ হাজার টাকা মূল্যের ৪শ’, কামার পাড়ার নিপেন্দ্র সরকারের ৩৫ হাজার টাকা মূল্যের ১শ’ ৬০, একই গ্রামের নূর মিয়ার ১১০, আলিশারকুল গ্রামের আব্দুল্লাহ মিয়ার ৯০, কামারপাড়া গ্রামের শান্ত সরকারের ৩ কেজি ওজনের ৭৫টি, কাল্পাুর ইউনিয়নের সিরাজনগর গ্রামের বিসমিল্লাহ পোলট্রি ফার্মের মালিক হাবিবুর রহমানের দুটি ফার্মের ১২শ’, একই গ্রামের সুফিয়ান মিয়ার খামারের ১শ’, নূরজাহান চা বাগানের মুনসুর মিয়ার খামারের ৮০টি, এম আর খান চা বাগানের মোহাজিরাবাদ গ্রামের ইব্রাহিম মিয়ার খামারের ১৬০টি, মির্জাপুর গ্রামের বৌলাশী গ্রামের রোমান মিয়ার খামারের ১শ ৫০, খিলগাঁও গ্রামের শাহজাহান মিয়ার খামারের ২শ’ যাত্রাপাশা গ্রামের কৃষন দে’র খামারের ১শ’ ৫০টিসহ প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার মুরগী মরার খবর পাওয়া গেছে। এতে এসব ক্ষুদ্র পোলট্রি খামারিরা প্রায় সাড়ে ২০ লক্ষাধিক টাকার আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন শ্রীমঙ্গল পোলট্রি বিজনেস এসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি বলেন, টানা ৮ ঘন্টা বিদ্যুৎ না থাকায় সারা উপজেলায় ছোট বড় ৫ শতাধিক ক্ষুদ্র খামারের মধ্যে একশ’রও বেশী খামারীরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তিনি বলেন’ এ পর্যন্ত ১ কেজি থেকে ৩ কেজি ওজনের ৮ থেকে ১০ হাজার মুরগী মারা যাবার খবর পেয়েছি। এসব মুরগীর বাজার মূল্য প্রায় ২০ লক্ষ টাকা। জানতে চাইলে মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির শ্রীমঙ্গলস্থ সদর দপ্তরের জেনারেল ম্যানেজার শিবু লাল বলেন, বেশ কিছু দিন পুর্বে সাব স্টেশনের সঞ্চালন লাইনের একটি খুঁটি বিপজ্জনকভাবে ভেঙ্গে পড়ে। গেল রমজান মাসে এর ক্রটি মেরামত করার প্রয়োজন থাকলেও রমজান মাসের কথা বিবেচনায় রেখে তা করা সম্ভব হয়নি। আবহাওয়ার এই দাবদাহে কেন সঞ্চালন লাইন মেরামতের সময় বেছে নেয়া হলো- জানতে চাইলে তিনি বলেন, গরমে গ্রাহকরা কষ্ট করছেন এজন্য আমরা দুঃখিত; কিন্তু এর কোন বিকল্প ছিলো না। ভবিষ্যত জটিলতা এড়াতে মেইন্টেন্যান্স কাজ করতে হচ্ছে।