কমলগঞ্জে বৃষ্টিকে উপেক্ষা করেও প্রকৃতির প্রেমে মত্ত পর্যটকরা। ভিড় চোখে পড়ার মত!

প্রকাশিত: ৪:২৭ অপরাহ্ণ, জুন ৭, ২০১৯
erety

স্টাফ রিপোর্টার: প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলা। বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করেও ঈদের ছুটিতে কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান মাধবপুর লেকসহ পর্যটন কেন্দ্র গুলোতে পর্যটকদের ভিড় ছিল। ঈদের দিন ও পরের দিন দুই দিনে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে দুই সহ¯্রাধিক পর্যটকের উপস্থিতিতে প্রবেশ মূল্য থেকে প্রায় ২ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে।
কমলগঞ্জের উল্লেখযোগ্য কেন্দ্রগুলো হলো বন্যপ্রাণীর নিরাপদ আবাসস্থল লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, পদ্মকন্যা নয়নাভিরাম মাধবপুর লেক, হামহাম জলপ্রভাত, বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ, বণ্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য রাজকান্দি বন, ঐতিহ্যবাহী লক্ষীনারায়ন দিঘী, ২০০ বছরের প্রাচীন ছয়চিরী দিঘী, শমশেরনগর চা বাগানের বাঘীছড়া লেক, আলীনগর পদ্মলেক, মাগুরছড়া পরিত্যক্ত গ্যাসফিল্ড, অপরূপ শোভামন্ডিত উঁচু নিচু পাহাড়বেস্টিত সারিবদ্ধ চা বাগানসহ বাংলাদেশের বৃহৎ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী মণিপুরী সম্প্রদায় এলাকা। তাছাড়া প্রকৃতির পূজারী খাসিয়া নৃ-গোষ্ঠীসহ গারো, সাঁওতাল, মুসলিম (পাঙাল) মণিপুরী, ত্রিপুরীদের আবাসস্থল রয়েছে এই উপজেলায়। এসব কেন্দ্রগুলোর সাথে এখানকার জীব বৈচিত্র উপভোগ করতে এসেছেন হাজার হাজার দেশী বিদেশী পর্যটক।


নাগরিক জীবনের শতব্যস্ততার মধ্যে একটু ছুটি মিললেই শহরবাসীরা অনেকেই ছুটে কমলগঞ্জের পর্যটন কেন্দ্রগুলো। গতকাল শুক্রবার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ঢাকা থেকে স্বপরিবারে ভ্রমণে আসা গৃহিনী নুসরাত জাহান ও ভৈরবের ব্যবসায়ী রাশেদুল ইসলাম বলেন বছরের একটি দিন পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদ আনন্দ বাড়িয়ে তুলে। এজন্য এ বছর আগে থেকেই পরিকল্পনা করে এখানে ছুটে আসা। এমনি অনুভুতি প্রকাশ করলেন অসংখ্য পর্যটক।
লাউয়ছড়া বনবিট কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন বৃষ্টির মাঝেও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে এসেছেন বন বিভাগ ও সহব্যস্থাপনা কমিটির পক্ষ থেকে পর্যটকদের যে কোন সমস্যা নজরদারিতে রেখেছেন। এখন পর্যন্ত পর্যটকদের কাছ থেকে কোন অভিযোগও পাওয়া যায়নি। লাউয়াছড়া ট্যুরগাইড এসোসিয়েশন সভাপতি মনঞ্জুর আহমেদ (মান্না) বলেন এ বছর অনকে পর্যটক কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গলের দর্শনীয় স্থানে বেড়াতে এসেছেন। তাদেরকে সেবা দেবার চেষ্টা করছে ট্যুও গাইডরা। তবে কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গলের ভাঙ্গাচোরা সড়কের কারণে পর্যটকদের কিছুটা ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। ঈদের দিন থেকে পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছে ট্যুরিষ্ট পুলিশ। বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বুধবার ঈদের দিন বৃষ্টির মাঝেও দেশী বিদেশী ১৩০০ পর্যটকের উপস্থিতি ছিল। তাদের প্রবেশ মূল্য থেকে রাজস্ব আয় হয়েছে ৬৫ হাজার টাকা। দ্বিতীয় দিনে বৃহস্পতিবার ২৫০০ পর্যটেকর উপস্থিতি ছিল। এ দিন রাজস্ব আয় হয়েছে ১ লাখ ২৯ হাজার টাকা।

মাধবপুর চা বাগান লেকে ও চা বাগানের উঁচু টিলায় উঠে নিচের লেক ও আর লেকের বেগুন পদ্মের সাথে বেগুনি পানি অবলোকন করতেও পর্যটকদের উপছেপড়া ভিড় ছিল। মাধবপুর লেকের দৃশ্য উপভোগ করে বেরিয়ে এসে একই রাস্তায় প্রায় ১০ কিঃ মিঃ যাওয়ার পরই বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহি হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ ও আর্কাইভ দেখতে পর্যটকদের ছুটাছুটি ছিল।
মাধবপুরে লেকে স্বপরিবারে আসা মৌলভীবাজারের আব্দুর গফুর, সিলেটের দক্ষিণ সুরমার বন্ধুদের নিয়ে আসা ফাহিম, বিয়ানীবাজারের কাসেম, ঢাকা সেনানিবাস এলাকার ফারুক, গাজীপুরের ফাইমা ইসলাম, কুমিল্লার নাজনীন সুলতানা ও নরসিংদীর আফরোজা খানম বলেন,লেকটিই আসলে মনোমুগ্ধকর। চা বাগানের উঁচু টিলায় উঠে নিচের লেকটি অবলোকন করা আরও মনোমুগ্ধকর। তবে বৃষ্টির সময় আশ্রয় নেবার কোন স্থান নেই।
শমশেরনগর চা বাগান লেক, কমলগঞ্জের বিভিন্ন চা বাগানের চায়ের গালিচায় প্রবেশ করে মনের মত ছবি তুলতেও পর্যটকদের উপস্থিতি কম ছিল না। শমশেরনগর চা বাগান গল্ফ মাঠ, মণিপুরী পল্লী ও খাসিয়া পুঞ্জিগুলোতে পর্যটকদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। এছড়া রাজকান্দি বনরেঞ্জের অধীন কুরমা বনবিটের গভীর অরণ্যেও গেছেন অসংখ্য পর্যটক হামহাম জলপ্রপাত দেখতে। তবে হামহাম জলপ্রপাত এলাকা এ্যাডভেঞ্চার প্রকৃতির ঝুঁকিপূর্ণ। তাই সেখানে শিশু নারীরা যেতে পারেননি। অনেক নারী গেছেন আবার ঝুঁকি নিয়ে।
ঈদের ছুটি উপভোগের কারণে বন বিভাগের বিশ্রামাগারের পাশাপাশি হীড বাংলাদেশের রেষ্টহাউস, শমশেরনগর সুইস ভেলী রিসোর্টসহ অন্যান্য রেষ্ট হাউস ও হোটেলগুলো অগ্রীম বুকিং হয়ে গিয়েছিল বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা । শমশেরনগর স্যুইস ভেলী রিসোর্টের মালিক রাকিবুর রহমান জানান আগামী ১৪ জুন পর্যন্ত তার এখানে কোন কটেজ খালি নেই।