কোভিডে নয়া আতংকঃ ব্লাক ফ্যাংগাস

প্রকাশিত: ২:১৮ অপরাহ্ণ, মে ২৬, ২০২১
ছবি ধলাইর ডাক

ডা: কামরুল ইসলাম শিপু ব্লাক ফ্যাংগাস নামক রোগ ভারতে বেশ আতংকের সৃষ্টি করেছে কারন হলো যারা কোভিডে আক্রান্ত হচ্ছে তাদের মধ্যে অনেকে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। বাংলাদেশে এটা নিয়ে একটু আতংকের সৃষ্টি হচ্ছে। বিভিন্ন পত্রিকায় বলা হয়েছে বাংলাদেশেও এই রোগে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গিয়েছে।

ব্লাক ফ্যাংগাস রোগের মূল নাম মিউকরমাইকোসিস। এটি একটি ছত্রাক ঘটিত খুবই দুর্লভ রোগ। ছত্রাক কি সেটা অনেকে জানেন না। ছত্রাক দিয়ে অনেক অনেক রোগ হয় আবার আমরা ছত্রাক খাবার হিসেবেও খেতে পারি (মাশরুম এক ধরনের ছত্রাক)। মিউকরমাইকোসিস খুবই ক্ষুদ্র, আণুবীক্ষণিক ছত্রাক দিয়ে হয়।

যেহেতু এই রোগ সংক্রমন হলে কালো রঙ্গয়ের প্রদাহনাকে-মুখে দেখা যায় এজন্য এটাকে ‘ব্লাক ফ্যাংগাস বা কালো ছত্রাক’ নামে ডাকা হয়।

অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে হঠাত করে এটা কোথা থেকে আসলো। আসলে ব্লাক ফ্যাংগাস আমাদের প্রকৃতিতে অনেক জায়গায়ই থাকে। এটা সব সময়ই আছে।

কিন্তু এটার একজন সুস্থ মানুষকে আক্রান্ত করার ক্ষমতা খুব একটানেই। এটা আক্রান্ত করে তাদেরকেই যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষ্মতা খুব কমে যায়।

কাদের হতে পারে?

  • যারা কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন এবং সে কারনে স্টেরয়েড দিতে হয়েছে।
  • যাদের ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রনে নেই।
  • যাদের ক্যান্সার আছে।

যেহেতু ডায়বেটিস আক্রান্ত ও ক্যান্সার আক্রান্তদের মধ্যে আগে এই রোগ দেখাযায়নি সেহেতু বলা যায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন সাথে এই রোগগুলো আছে এবং যাদের স্টেরয়েডথেরাপী দেয়া লাগছে তারা এইসংক্রমনের স্বীকার হতে পারেন।  এছাড়া আরো কিছু মানুষ এই রোগের রিস্কে থাকেন, করোনাপ্রেক্ষাপটে তাদের নিয়ে আলোচনায় গেলামনা।

ব্লাক ফ্যাংকাস/কালো ছত্রাক সংক্রমনের লক্ষনঃ

  • অনেক ধরনের লক্ষন হতে পারে। করোনাপ্রেক্ষিতে শুধু নাক-মুখ ও ফুসফুসের সংক্রমনের কথা বলছি-
  • নাক বন্ধলাগা
  • নাকের ভিতর, মুখে কালোর ঙের প্রদাহের সৃষ্টি হওয়া।
  • নাক থেকে কালোর ঙের রক্ত বেরিয়ে আসা।
  • মুখমন্ডলের এক পাশ ফুলে যাওয়া, অবশ হয়ে যাওয়া।
  • চোখে দেখতে সমস্যা হওয়া।
  • শ্বাসকষ্টহওয়া।
  • বুকেব্যাথা।
  • জ্বর ও কাশি।

এটা থেকে বাচবেন কিভাবেঃ

  • যেহেতু এই রোগ বর্তমানে করোনা আক্রান্তদের সংক্রমিত করছে সেজন্য এটা প্রতিরোধে করোনা থেকে বেচে থাকা সবচেয়ে কার্যকর উপায়।

এছাড়া-

  • ডায়োবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখুন।
  • মাস্ক ব্যবহার করুন বিশেষ করে ধূলোবালিপূর্ণ জায়গায়।
  • চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ধরনের স্টেরয়েড নেয়ে থেকে বিরত থাকুন।
  • পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন।
  • মুখের যত্ন নিন। ব্রাশ করুন, মাউথওয়াস ব্যবহার করুন।
  • আপনার যদি কোভিড হয়ে থাকে আর উপরি উক্ত লক্ষন গুলো দেখেন তাহলে আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসককে জানান। মনেরাখুন (শ্বাস কষ্ট হওয়া, বুকে ব্যাথা,জ্বর ও কাশি) এই লক্ষন গুলো করোনায়ও দেখা যায়।
  • পচা পাউরুটি, ফল, সবজি ইত্যাদিতে বিভিন্ন ছত্রাক থাকে। এগুলো যেখানে সেখানে ফেলে রাখবেন না।
  • ফ্রিজ পরিষ্কার রাখবেন।
  • যাদের করোনা হয়েছে এবং ডায়বেটিস আছে তারা বিশেষ সতর্ক থাকবেন। মাটি নিয়ে কাজ করার সময় (যেমন বাগানে কাজ করা) গ্লাভস ব্যবহার করবেন এবং কাজ শেষে ভাল করে পরিষ্কার হবেন।

কি করবেন নাঃ

  • নাকে-মুখে কোন লক্ষন দেখাদিলে অবহেলা করবেন না।
  • লক্ষন দেখাদিলে আতঙ্কিত হবেন না।
  • চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ধরনের ঔষুধ খাওয়া যাবেনা।
  • কবিরাজি বা হোমিও প্যাথি জাতীয় চিকিৎসা করাতে যাবেন না।
  • যে সব টেস্টের প্রয়োজন হবে সেগুলো করতে দেরি করবেন না।
  • আপনার চিকিৎসক যদি আপনার এই রোগ আছে বলে নিশ্চিত হোন, তাহলে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করতে অবহেলা করবেন না।

বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই রোগ নিয়ে আতংকিত হবার কিছুনেই আপাতত। কিন্তুচিকিৎসক ও বিভিন্ন জনস্বাস্থ্যসংস্থার উচিত সক্রিয় ভাবে এই রোগের খবর রাখা এবং এটার বিস্তার রোধে সাম্ভাব্য সকল ব্যবস্থানেয়া।

লেখকঃ

ডা: কামরুল ইসলাম শিপু

সিনিয়র লেকচারার, মাইক্রোবায়োলজি, নর্থইষ্ট মেডিকেল কলেজ

মাস্টার্সস্টুডেন্ড, ক্লিনিক্যাল মাইক্রোবায়োলজি এন্ড ইনফেক সাস ডিজিজ

দ্য ইউনিভার্সিটি অব এডিনবরা।