নজরুল ইসলাম ll মহামারি করোনা ভাইরাসে পুরো পৃথিবী স্তব্ধ। বিশ্বের মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা করোনার মাঝেই গেল বছর রমজান মাস পালন করেছে ,আবারও। প্রতি বছর বিশ্বের কোটি কোটি মুসলিম পবিত্র রমজান মাস পালন করেন। এ সময় ইসলামের বিধান অনুযায়ী তারা সেহরি থেকে ইফতারের পূর্ব পর্যন্ত কোনো ধরনের খাবার এবং পানীয় গ্রহণ থেকে বিরত থাকেন। যুক্তরাজ্যে ৩০ লাখের বেশি মুসলিম বসবাস করেন- যা দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় পাঁচ শতাংশ এবং তাদের বেশিরভাগই দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত। বিশ্ব করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্যস্ত। ভ্যাকসিন-ই একমাত্র আশা, its a “injection of hope, যা করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। পবিত্র রমজান মাসে রোজা রেখে আমরা কি আমাদের শরীরে ভ্যাকসিন দিতে পারি? বিভ্রান্ত এখনও আমাদের চারপাশে। আমাদের অবশ্যই এই পরিস্থিতিতে ইসলামিক পণ্ডিতদের কথা শুনতে হবে। রামাদ্বানে আমাদের শরীরে ভ্যাকসিন প্রয়োগে রোজা ভংগ হবে কি না, ভ্যাকসিন গ্রহন উচিত কি না, এইসব বিভ্রান্তি নিয়ে এনএইচএস (NHS) ইউ ‘কে জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা যুক্তরাজ্যের নির্দেশনা, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের বিবরণ, সমস্ত ইসলামী পণ্ডিতদের বিবৃতি সমম্বয়ে একটু আলোচনা করছি।
ভ্যাকসিন নিলে রোজা ভাঙ্গবে না বলে দাবি করেছেন ব্রিটেনের ন্যাশন্যাল হেলথ সার্ভিস (NHS) ,ইসলামিক স্কলার (আলেম) ও শীর্ষ মুসলিম কর্মকর্তারা। একই সঙ্গে রোজাদার মুসলমানদের সুবিধার্থে রাত ১০ টার পরেও কিছু ভ্যাকসিন কেন্দ্র খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্রিটিশ সরকার, যাতে করে ইফতারের পর তারা ভ্যাকসিন নিতে পারেন। ব্রিটেনের মোট মুসলমান জনসংখ্যার ৩৮ শতাংশ পাকিস্তানি এবং ১৫ শতাংশ বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত। ব্রিটেনে করোনায় মৃত্যুহার ছিল সবচেয়ে বেশি এ দুই সংখ্যালঘু কমিউনিটিতে। ব্রিটেন ও বাংলাদেশে করোনা ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োগের চলাকালেই রমজান মাস চলছে। ব্রিটেনে ১২ এপ্রিল থেকে রোজা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে ঠিক একদিন পর রোজা শুরু হয়েছে। যুক্তরাজ্যের লিডসের ইমাম ক্বারী অসীম বিবিসি নিউজকে এক বার্তায় বলেছেন, ভ্যাকসিন রক্ত প্রবাহের চেয়ে পেশীতে চলে যায়, ইহা পুষ্টিকর নয়, এই ভ্যাকসিনে কোনও ধরনের নিউট্রেশন নেই। এটি রোজা ভাঙার মতো নয়।
মসজিদ ও ইমামদের জাতীয় উপদেষ্টা বোর্ডের সভাপতিত্বকারী জনাব অসীম বিবিসিকে বলেছেন,” বেশিরভাগ ইসলামী পন্ডিতের ধারণা, রমজানের সময় এই ভ্যাকসিন গ্রহণ করলে রোজা বাতিল হবে না। তিনি মুসলিম সম্প্রদায়কে বলেছেন “আপনি যদি ভ্যাকসিনের জন্য যোগ্য হন এবং আপনার আমন্ত্রণটি পেয়ে থাকেন, আপনার নিজেকে জিজ্ঞাসা করা দরকার: আপনি কি ভ্যাকসিন গ্রহণ করবেন যা কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। না আপনি কোভিড আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি নিতে চান যা আপনাকে বেশ অসুস্থ করে করতে পারে। যদি আপনি সংক্রামিত হন তখন পুরো রমজান মা’স আপনাকে হাসপাতালে কাঠাতে হতে পারে।
যুক্তরাজ্যের পূর্ব লন্ডনের সার্জারি প্রকল্পের সিনিয়র জিপি ডাঃ ফারজানা হুসেন বলেছেন, বলেছেন আমরা জানি যে অনেক মুসলমান রমজান মাসে তাদের কোভিড টিকা দেওয়ার বিষয়ে কিছুটা উদ্বিগ্ন। অনেক লোক বিশ্বাস করে যে ইনজেকশন দেওয়া আসলে রোজা ভঙ্গ করে,” তিনি বলেছেন “এটি মোটেও হয় না। কারণ এটি পুষ্টি হিসাবে বিবেচিত হয় না। তিনি আরও যোগ করেছেন: “কুরআন বলেছে আপনার জীবন বাঁচানো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়: ‘একটি জীবন বাঁচানো সমগ্র মানবতাকে বাঁচানো অনুশীলনকারী মুসলমানদের তাদের ভ্যাকসিন গ্রহণের দায়িত্ব। এনএইচএস-(NHS)এর বিভাগীয় প্রধান ইমাম ইউনুস দুধওয়ালা বলেছেন, বেশিরভাগ মুসলিম আলেমরা বলছেন, রোজা রেখে ভ্যাকসিন নেওয়া সম্ভব। অর্থাৎ ভ্যাকসিন নিলে রোজা ভাঙ্গবে না।
বিশ্বের বিশেষজ্ঞরা বলছেন,ভ্যাকসিনই এখন পর্যন্ত নিজের ও প্রিয়জনের জীবনরক্ষার কার্যকর প্রায়োগিক মাধ্যম। ব্রিটেনের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের ন্যাশনাল ডিরেক্টর ডা. নিকি কানানী বলেছেন, ব্রিটেনের সব ধর্ম বিশ্বাসের মানুষের এগিয়ে আসা উচিত ভ্যাকসিন নিতে। এনএইচএসের অবজারভেটরি বিভাগের প্রধান ডা. হাবিব নাকবি বলেছেন, ব্রিটেনের মুসলিম আলেম ও মসজিদ কর্তৃপক্ষগুলো নিশ্চিত করেছে যে, ভ্যাকসিন নেওয়া বা করোনা শনাক্তে লিটারেল ফ্লোটেস্ট রোজা ভঙ্গের কারণ হবে না। ডার্বির জিপি এবং বিআইএমএর প্রতিনিধি ডাঃ শেহলা ইমতিয়াজ-উমির বিবিসিকে বলেছেন: “কোভিড মহামারীজনিত কারণে আমরা আমাদের সম্প্রদায় গুলিতে প্রচুর ধ্বংসযজ্ঞ দেখেছি। আমরা আমাদের ভবিষ্যতের রামাদান গুলি নিশ্চিত করতে চাই। “দুর্ভাগ্যক্রমে এটি গত বছর এবং এ বছর আমাদের ক্ষতিগ্রস্থ করছে। তবে আমরা যদি আমাদের ভ্যাকসিনগুলি গ্রহণ করি এবং আমরা সকলেই সুরক্ষিত থাকি, তা নিশ্চিত করতে পারি, আমরা নিশ্চিত করতে পারি যে, আগামী রমজান কিছুটা স্বাভাবিকতা ফিরে পাবে।
পাঠক, রোজাকালিন ভ্যাকসিক গ্রহনে রোজা ভঙ্গ যাবে কি না এই নিয়ে আমি কোন ফতোয়া দিচ্ছি না ,দয়া করে এটি নোট করুন। বাংলাদেশের ইসলামিক ফাউন্ডেশনও গত ১৪ই মার্চ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভা কক্ষে দেশের জ্যেষ্ঠ আলেমদের সঙ্গে এক মতবিনিময়ের পর জানিয়েছে, রোজা রেখে করোনাভাইরাসের টিকা নিতে কোন সমস্যা নেই। ইসলামিক চিন্তাবিদ বিশ্ব স্বাস্থ্য বিযেশজ্ঞরা কি বলেছেন, কি ভাবছেন- তা নিয়ে ছিল আমার এই প্রতিবেদন। আপনার স্থানীয় জ্ঞানী গুনী আলেম ও লামাদের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হবেন। আমার বিস্বাস আলোচ্য আলোচনা রোজা রেখে করোনা ভাইরাসের টিকা গ্রহন করতে সহায়ক ভুমিকা পালন করবে।
লেখক: ফ্রিল্যান্স জার্নালিস্ট, ওয়ার্কিং ফর ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (NHS) লন্ডন, মেম্বার, দ্য ন্যাশনাল অটিস্টিক সোসাইটি ইউনাইটেড কিংডম।