‘‘করোনা ভাইরাসের কারণে বদলে গেছে আমাদের জীবন। আনন্দ-বেদনায়, সংকটে, উৎকণ্ঠায় কাটছে সময়।
মাহমুদুল হাসান রুমন: কোভিড ১৯ পাল্টে দিয়েছে জীবনের অনেক হিসাব নিকাশ। অনেক স্বপ্নের অকাল মৃত্যুতে গোটা পৃথিবী আজ স্তব্দ। মানুষের মুখের হাসি নেই আর আগের মতো। প্রান খুলে কতো দিন যে হাসতে পারি নাই তার হিসাব আর নেই আমার কাছে।। আচ্ছা যখন কারো স্বপ্নের সুন্দর মৃত্যু হয় তখন কি আর সে হাসতে পারে।। আমি আজ আমার আর আমার রুমমেটের করুনার ভয়াবহ দিন নিয়ে আলোচনা করবো।
আমি একজন প্রবাসী মিডিলইস্টের একটি ধনী রাস্ট্র সংযুক্ত আরব আমিরাতে থাকি। একটি অফিসে কাজ পাশাপাশি ছোটখাট ব্যবসা করি।। আজ প্রায় ৪ মাস হলো আমার কোনও কাজ নেই ব্যবসাও লাটে তারপরেও মুখে হাসি নিয়ে বলি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আর সেটা বলতে হয় লৌকিকতার খাতিরে।
আজ এই পৃথিবীর ক্রান্তিলগ্নে সত্যি বলতেছি আমি বা আমরা ভালো নেই।। আমার দেখা বাস্তব কথা বলতেছি যেটা আমার নিজের সাথে আমার রুমমেইটদের সাথে নিরন্তর ভাবে গঠতেছে। প্রবাস জীবনে কাজ থাক আর নাই থাক মাস শেষ হলে রুম ভাড়া, কারেন্ট বিল,পানি বিল খাওয়ার বিল দিতেই হবে যেটা আজ ৪ মাস ধরে অনেকেই দিতে পারতেছে না। একদিকে নিজের জীবন বাচানোর তাগিদ অন্য দিকে করোনার ভয়, সর্বদিক দিয়ে আজ আমরা খুবি অসহায়। অনেক কস্টে যাচ্ছে প্রবাসীদের জীবন তার পরেও হাসিমুখে বলতেছে আমরা ভালো আছি। নিয়তির বরই নির্মম আচরন আমাদের সাথে। প্রবাসে যে কি কষ্ট একমাত্র প্রবাসী ছাড়া আর কেউ জানে না। এমন কি জনমদুখিনী মাও জানে না তার ছেলের কি কষ্ট।। সারাদিন রুমে ইন্টারনেট ব্যবহার করে দিন যাচ্ছে আমাদের। মহান রবের প্রশংসায় আমাদের সময় যাচ্ছে ভালোই আলহামদুলিল্লাহ।। আমরা প্রবাসীদের আনন্দ নেই, হাসি খুশি থাকতে নেই, আমরা শুধুই দিতে জানি বিনিময়ে একটু ভালবাসা ভালো ব্যবহার কি পেতে পারি না?
আমি কিন্তু লেখক না যে, সুন্দর করে সুন্দর সুন্দর ভাষা দিয়ে ঘুচিয়ে মার্জিত ভাবে লেখবো। আমি আমার মনের আবেগ দিয়ে বাস্তবতা উপলব্ধি করে লেখতেছি।। ঈদের সময় আমার বন্ধুর পরিবার থেকে চাপ দিতেছে টাকার জন্য আর বন্ধুর কাজ নেই প্রায় ৩ মাস ধরে টাকা কোথা হতে দিবে পরিবার কে। কি দিয়ে জনমদুখিনী মায়ের নতুন কাপড় দিবে স্ত্রী বাচ্চাদের নতুন কাপড়ের বায়না সে কিভাবে মেটাবে আছে কি কারো জানা? কোভিড ১৯ প্রমান করে দিয়েছে কেহ কারো নয়।
আজ আমরা যারা প্রবাসী একটু জ্বর হলেই ভয়ে আধমরা হয়ে যাই, কাশি দিলেই অন্যরা আমাদের দিকে বাকা চোখে চেয়ে থাকে। আমরা কি করবো আছে কি বা আমাদের করার আছে?? আজ আমরা প্রবাসে যে কি আনন্দে আছি সেটা একমাত্রই আমরা জানি শরীল খারাপ হলে আমাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়ার মতো কেউ নেই, না খেলে কেউ জিজ্ঞাসা করে না তুমি কি খেয়েছ? আমরা পরিবারের মুখে হাসির জন্য আজ দুরপ্রবাসে সারাটিজীবন দিয়েই গেলাম আজ এখন যখন দিতে পারতেছি না তখন দেখতেছি আপন মানুষের অন্য রুপ। ( সবাই কিন্তু এক না)
কেভিন ১৯ তুমি না থাকলে সুন্দর মুখের সুন্দর ব্যবহারের মানুষের অন্য চেহারাটা দেখতে পারতাম না।। আমাদের দেখে খুবি ভালো লাগে যখন সেলুন ওয়ালারা বলে প্রবাসীরা আমাদের দোকানে আসবেন না। প্রবাসীরা খুবি খারাপ। আসলেই আমরা খারাপ কারন আমরা প্রবাসীরা নিজেদের কথা কখনোই ভাবি না তাই আমরা খারাপ।। আমরা প্রবাসীরা আজ মাছের কাটার মতো গলায় বিধে আছি না পারতেছি বের হতে না পারতেছি ভিতরে যেতে। ভাগ্যদেবী আজ আমাদের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।। সত্যি আজ আমরা মহা আনন্দে আছি পরিবার আত্বীয় স্বজন ছেড়ে। মাঝে মধ্যে মনে হয় আসলে আমরা কি মানুষ না ভিনগ্রহের কোন অজানা প্রানী!
আজ আমরা প্রবাসীরা অনেক আতংকে আছি যদি প্রবাসে মরে যাই তাহলে আমাদের পরিবারের কি হবে? কে দেখবে আমাদের প্রিয় মানুষদের? প্রিয় দেশবাসী আমাদের কয়েকজনের ভুলের জন্য গোটা প্রবাসীদের নিয়ে খারাপ মন্তব্য করে আমাদের কষ্ট দিবেন না দয়া করে। প্রবাসী বলে কি আমাদের মন নেই, আবেগ নেই! ভালবাসার অধিকার নেই?
আমরা চাই না জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তান হয়ে থাকতে আমারা চাই আপনাদের ভালবাসায় পরিবারে ভালবাসায় সিক্ত হতে। আমরা চাই সকল প্রবাসীদের পরিবার এই খারাপ সময়ে আমাদের পাশে থাকে, আমাদের যেন সাহস দেয়, আমাদের উৎসাহ দেয়। পরিবারের সুখের জন্য আমরা আমাদের জীবন, যৌবন অকাতরে বিলিয়ে দিতে পারি আর আমাদের পরিবার কি আমাদের এই খারাপ সময়ে আমাদের সাহস, প্রেরণা দিতে পারবে না? আমরা বিশ্বাস করি অবশ্যই আমাদের পরিবার আমাদের দেশের মানুষ আমাদের সাথে আমাদের পাশে আছেন, ছিলেন আর থাকবেন। সত্যি বলতেছি আজ আমরা খুবি অসহায়। আপনারা যদি আমাদের সাপোর্ট না করেন তাহলে আমাদের যে বেচে থাকাই অর্থহীন। আমরা প্রবাসীরা ভীষন ভালবাসি আমাদের দেশ ও পরিবার কে। দেশের মানুষগুলো আমাদের খুবি আপনজন।। আমি আমার মনের কথা বলেছি কাউকে আক্রমন করে আমি বলিন। যদি ভুল কিছু মনে হয় তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন।
বিশ্ব আজ নতুন রুপে আমাদের মাঝে এসে দাড়িয়েছে তার অতি নিস্টুর রুপ আমরা আর আগে দেখিনি।। প্রায় ৪ মাস হলো আল্লাহর ঘর মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তে পারতেছি না। আমি ভেবে চিন্তায় অস্থির যে মহাবিশ্বের একমাত্র মালিক, একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কি আমাদের তার রহমত থেকে বঞ্চিত করতেছেন? হে আল্লাহ আমাদের তুমি ক্ষমা করে দাও সুন্দর পৃথিবীকে আবার আমাদের জন্য বাসযোগ্য করে দাও। তুমি ছাড়া মাবুদ আমাদের আজ আর কেউ নেই। মহামারী করোনা থেকে আমাদের মুক্তি দাও।। আমীন সুম্মা আমীন।
আমরা প্রবাসীরা কোয়ারান্টাইনে থেকে অভ্যস্ত নয় তার পরেও বেচে থাকার প্রবল ইচ্ছায় আজ আমরা নিরুপায়। ইনশাআল্লাহ পৃথিবী আবার হাসবে করোনা পালিয়ে যাবে। আমরা আবার মিলেমিশে একাকার হয়ে যাবো।। কেভিন ১৯ অনেক কিছু আমাদের শিক্ষা দিয়েছে। আমাদের জীবনের কুনু মুল্য নেই পরিবার আজ পরিবারের পাশে নেই,মা ছেলের লাশ দেখতেছে না। ডাক্তার রোগি দেখে না বাহ কি চমৎকার এই দুনিয়া।। আল্লাহ আমাদের তুমি রহম করো।।
মাহমুদুল হাসান রুমন
সংযুক্ত আরব আমিরাত।