কমলগঞ্জে আকস্মিকভাবে দলই চা বাগান বন্ধ ঘোষণা ॥ প্রতিবাদে শ্রমিকদের অবস্থান কর্মসুচী
কমলগঞ্জ প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ব্যক্তি মালিকানাধীন দলই চা বাগান আকষ্মিকভাবে অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। প্রতিবাদে বাগানের শ্রমিকরা অবস্থান কর্মসুচী পালন করেছে। গত সোমবার রাতে আকষ্মিকভাবে চা বাগান কর্র্তৃপক্ষ কারখানার অফিসে নোটিশ টাঙিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য দলই চা বাগান বন্ধ ঘোষণা করে।
এ ঘটনায় চা শ্রমিকরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছেন এবং চা শ্রমিক ইউনিয়নের মনু-ধলই ভ্যালীর এক সভা থেকে সপ্তাহব্যাপী প্রতিবাদ কর্মসূচী ঘোষণা করেছে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় অফিসের সম্মুখে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে চা বাগান কর্তৃপক্ষ কতিপয় শ্রমিক কর্মচারীর উচ্ছৃঙ্খল আচরণ ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের ইন্ধন রয়েছে বলে দাবি করছে।
মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিন দলই চা বাগানে দেখা যায়, দলই চা বাগান কোম্পানীর উপ-মহা ব্যবস্থাপক এম এম ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি নোটিশ অফিসের বোর্ডে টাঙিয়ে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ১৩ নম্বর ধারা অনুযায়ী অনির্দিষ্টকালের জন্য চা বাগান সম্পূর্ণ (লক আউট) বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে আকষ্মিকভাবে চা বাগান বন্ধ ঘোষণা করায় চা শ্রমিকরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। মঙ্গলবার সকাল থেকে বাগানের শত শত নারী ও পুরুষ শ্রমিকরা দলই অফিসের সম্মুখে অবস্থান নিয়েছেন। এ ঘটনায় চা বাগানের আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় মঙ্গলবার সকাল থেকে অফিসের সম্মুখে কমলগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) সুধীন চন্দ্র দাসের নেতৃত্বে এক প্লাটুন পুলিশ অবস্থান করছে। বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের মনু-দলই ভ্যালী কার্যকরী কমিটি মঙ্গলবার দুপুরে জরুরী বৈঠকে বসে। বৈঠক শেষে চা বাগান আকষ্মিক বন্ধ ঘোষনার প্রতিবাদে মনু-দলই ভ্যালী কার্যকরী পরিষদের সভাপতি ধনা বাউরী ও সম্পাদক নির্মল দাশ পাইনকা স্বাক্ষরিত কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত আবেদনে দলই চা বাগান কর্তৃপক্ষের বে-আইনী, একতরফা ও উস্কানীমূলক বাগান বন্ধের নোটিশ প্রত্যাহারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
দলই চা বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি সভাপতি গৌরাঙ্গ নায়েক, সাধারণ সম্পাদক সেতু রায়, ইউপি সদস্য শিব নারায়ন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সোমবার সকাল থেকে বাগান ব্যবস্থাপক ও কর্মচারীরা আমাদেরকে দিয়ে ৩ গুণ চা পাতা উত্তোলন করান। মঙ্গলবার বিদ্যুৎ থাকবে না বলে কারখানার বাবু গোলাম হোসেন অতিরিক্ত কাজ করান। সে হিসেবে তারা এক দিনে ৩ গুণ কাজ করেছেন।
চা শ্রমিক খোদেজা বেগম, গীতা গড়, সবিতা মাদ্রাজী সহ নারী শ্রমিকরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রতিদিন সেকশনে গাড়ি যায় উত্তোলিত পাতি আনতে। সোমবার কোন গাড়ি যায়নি। আমরা মাথায় করে নিয়ে আসি। তারা আরও বলেন, বাগানে কোন সমস্যা নেই। হঠ্যাৎ করে কেন এভাবে বাগান বন্ধ করা হলো আমরা সেটা বুঝতে হবে। আমাদের এক সপ্তাহের মজুরি বাকি রয়েছে। এখন আমাদের খাবার দাবারেও কষ্ট ভোগ করতে হবে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রামভজন কৈরী বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে উৎপাদন চলাকালীন সম্পূর্ণ বে-আইনী, একতরফাভাবে দলই চা বাগান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি ম্যানেজমেন্টের দায়ী ব্যক্তির শাস্তি দাবি করেন এবং দ্রুত নোটিশ প্রত্যাহার করে বাগান চালুর জন্য সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি জোর দাবী জানান। তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় ঈদের দিন ব্যতীত মনু-দলই ভ্যালীর ২৩টি চা বাগানে এক সপ্তাহের প্রতিবাদ কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়েছে।
দলই চা বাগানের প্রধান ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে জানান, চা বাগানের কতিপয় শ্রমিকদের উচ্ছৃঙ্খল আচরনে বাগান বন্ধ করতে কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়েছে। এসব শ্রমিকদের উস্কানী দিচ্ছেন মাধবপুর ইউপি চেয়ারম্যান পুষ্প কুমার কানু।
তবে অভিযোগ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান পুষ্প কুমার কানু বলেন, চা বাগান ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম দুর্ণীতি বিষয়ে শ্রমিকদের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এসব বিষয় নিয়ে কয়েক দফা বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। তা বলতে গেলেই ব্যবস্থাপক ক্ষুব্দ হয়ে উঠেন।
কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, দলই চা বাগানে যাতে পরিস্থিতি ভালো থাকে সে জন্য সেখানে মঙ্গলবার সকাল থেকে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন, দলই চা বাগান কর্তৃপক্ষের একটি নোটিশের কপি পেয়ে বিষয়টি জানতে পারেন। শ্রমিক অসন্তোষের কারণ দেখিয়ে দলই চা বাগান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।