কমলগঞ্জে ধলই চা বাগান ব্যবস্থাপকের অপসারনের দাবিতে চা শ্রমিকদের বিক্ষোভ, কর্মবিরতি
ডেস্ক নিউজ: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ধলই চা বাগানের প্রধান ব্যবস্থাপকের অপসারনের দাবীতে বৃহস্পতিবার (৯ মে) সকাল ৮টা থেকে কাজে যোগ না দিয়ে বাগানের ৫ শতাধিক শ্রমিক কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে কর্মবিরতি পালন করেন। ধলই চা বাগানের প্রধান ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে বাগানের ছায়াদানকারী গাছ কর্তন, বাংলোয় কর্মরত নারী শ্রমিকদের যৌন হয়রানি, শ্মশান ভূমিতে চারা রোপনসহ বিভিন্ন অনিয়ম দূর্নীীতর প্রতিবাদে ব্যবস্থাপকের অপসারনের দাবিতে কর্মবিরতি পালন করে বিক্ষোভ করে শ্রমিকরা।
ঘটনার খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার দুুপুরে ধলই চা বাগানে গিয়ে দেখা যায় নারী পুরুষ মিলিয়ে এ চা বাগানের ৫৮২ জন চা শ্রমিক কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে কর্মবিরতি পালন করছে। কর্মবিরতি পালনের কারণ জানতে চাইলে ধলই চা বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সদস্য আশা বাউরী, নারী চা শ্রমকি কুসুম রিকিয়াসন, চা শ্রমিক কৃষ্ণ পাশি বলেন, ধলই চা বাগানে প্রধান ব্যবস্থাপক হিসেবে আমিনুল ইসলাম যোগদানের পর থেকে ছায়াদানকারী গাছ বিক্রি বেড়ে যায়। একটি সংঘবদ্ধ গাছ ব্যবসায়ীদের সাথে এই ব্যবস্থাপকের গোপন সম্পর্ক রয়েছে। এর প্রতিবাদে গত জানুয়ারি মাসে একদিন চা শ্রমিক ধলই চা বাগান কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে কর্মবিরতি পালন করেছিল। পরে মাধবপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান পুষ্প কুমার কানুর মধ্যস্থতায় একটি সামাজিক বৈঠক করে বিষয়টি সমাধান করা হয়েছিল। তখন ব্যবস্থাপক ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ করবেন না বলে অঙ্গিকারও করেছিলেন।
কারখানা থেকে না বলে কিছু চা পাতা নেওয়ার কারণে কয়েকজন চা শ্রমিকের কাজ বন্ধ করা হয়েছিল। সে অপরাধে চা শ্রমিক রফিক মিয়ার কাছ থেকে ব্যবস্থাপক জরিমানা হিসেবে ২০ হাজার টাকা, দীলিপ বাউরীর কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা, ও সত্তার মিয়ার কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা নিয়েছিলেন। এর পরও তাদের আর কাজে যোগ দিতে দেননি ব্যবস্থাপক।
চা শ্রমিক কৃষ্ণ পাশি অভিযোগ করেন, চা শ্রমিক চা বাগানের বাইরে একটি শ্মশাান হিসেবে কিছু ভূমি ব্যবহার করছিলেন যুগ যুগ ধরে। সম্প্রতি বাগান ব্যবস্থাক এ শশ্মান ভূমিতে চায়ের চারা রোপন শুরু করেছেন। তাছাড়া ব্যবস্থাপকের বাংলোয় কর্মরত নারী শ্রমিকদের নানাভাবে যৌন হয়রানি করছেন ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলাম। চা শ্রমিকরা পাহাড় থেকে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করছিলেন বহুকাল থেকে। সম্প্রতি সেই জ্বালানি কাঠের উৎসস্থল ব্যবস্থাপক কেটে সাফাই করে নিয়েছেন।
ধলই চা বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক সেতু রায় কর্মবিরতি ও অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আসলেই এ চা বাগানের প্রধান ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলাম নানা অপকর্মের সাথে জড়িত।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের মনু-ধলই ভ্যালির (অঞ্চলের) সাধারণ সম্পাদক নির্মল দাশ পাইনকা বলেন, ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলামের আচরণে ও কাজে বাধ্য হয়ে সাধারণ চা শ্রমিক নারী পুরুষ একযোগে কর্মবিরতি পালন করে। তিনি আরও বলেন ধলই চা বাগানে যোগদানের আগে আমিনুল ইসলাম যে কয়টি চা বাগানে ছিলেন, সেব চা বাগানের তার বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছে।
তবে মুঠোফোনে কথা হলে ধলই চা বাগানের অভিযুক্ত প্রধান ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলাম বলেন, দুইজন চা শ্রমিকের কাজ না দেওয়া নিয়ে কিছুটা শ্রমিক অসন্তোষ রয়েছে। চা শ্রমিকদের কাছ থেকে জরিমানার টাকা গ্রহন ও বাংলোয় নারী চা শ্রমিকদের যৌণ হয়রানি করা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলাম বলেন, তিনি এখন বাগানের বাইরে আছেন। কিছুক্ষণের মধ্যে ফিরে এসে সরাসরি কথা বলবেন। প্রায় আধাঘন্টা পর ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলাম ধলই চা বাগান কারখানায় আসার পর তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি এখন কথা বলবেন না বলেই দ্রুত জিপ গাড়ি নিয়ে স্থান ত্যাগ করেন।