কমলগঞ্জে ময়নাতদন্তের জন্য ৫ মাস পর তরুণীর লাশ উত্তোলন

প্রকাশিত: ৩:০৭ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৮, ২০১৯
ছবি ধলাইর ডাক

স্টাফ রিপোর্টার: সড়ক দূর্ঘটনা নয়, মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে,মায়ের এমন অভিযোগে আদালতের নির্দেশে দাফনের প্রায় ৫ মাস পর ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুরস্থ গুড নেইবারস বাংলাদেশ সিডিপির এসএস সার্পোটার স্বেচ্ছাসেবী কর্মী তরুণীর লাশ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে।

রোববার (০৭ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১১ টায় কমলগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাসরীন চৌধুরী ,শমশেরনগর পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ অরুপ কুমার চৌধুরী ও কমলগঞ্জ থানার এসআই ফরিদ মিয়ার উপস্থিতিতে উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের পুর্ব আদকানী পারিবারিক কবরস্থান থেকে ওই কিশোরীর লাশ উত্তোলন করা হয়।

গত (২১ জুলাই) বিকালে আদমপুর-কোনাগাও সড়কে দ্রুতগতির চলন্ত মোটরসাইকেলের পিছন থেকে ছিটকে পড়ে গরুতর আহত হয় পরে হামপাতাল নেওয়ার পর এনজিও কর্মী তরুণীর মৃত্যু হয়। সে সময় ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ দাফন সম্পন্ন হয়। কিন্তু সম্প্রতি ওই এনজিও কর্মী তরুণী লিজার মা আলেমা বেগম বাদী হয়ে গত ২৪ আগষ্ট সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৩নং আমল আদালত,মৌলভীবাজারে মামলা দায়ের করেন। (মামলা নং ৩২৫/ ২৪/১০/১৯) । এ মামলার প্রেক্ষিতে আদালত পুনরায় ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে লাশ উত্তোলনের আদেশ দেন। মেয়ে লিজা আক্তার বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা গুড নেইবারস এর মৌলভীবাজার সিডিপির এসএস সার্পোটার হিসেবে কর্মরত থাকাকালীন সময়ে বিগত ২১ জুলাই ২০১৯ইং তারিখে প্রজেক্ট ম্যানেজার জন বৃগেন মল্লিক ও প্রোগ্রাম ইনচার্জ জীবন্ত হাগিদকসহ অন্যান্য সহকর্মীদের দায়িত্বহীনতা ও গাফিলতির কারণে নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ করে। মামলাসূত্রে জানা যায়, সেদিন বিকাল তিন টায় অফিসের কাজে লিজা পূর্ব কোনাগাঁও যায়। রিকশা বা সিএনজি যোগে যাওয়ার সূযোগ থাকলেও প্রজেক্ট ম্যানেজার জন বৃগেন মল্লিক(৪০) ও প্রোগ্রাম ইনচার্জ জীবন্ত হাগিদকে লিজা আপত্তি জানানোর পরও জোর পূর্বক ধমক দিয়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে অনিচ্ছা স্বত্তেও ফখরুল ইসলাম শাকিল ড্রাইভিং ও লাইসেন্সবিহীন একজন অদক্ষ সহকর্মী মোটরসাইকেলে যেতে বাধ্য করা হয়। যে বিভিন্ন সময়ে লিজার সাথে ঝগড়া বিবাদ ও অশোভন আচরণ করে থাকতো । লিজা বারবার বাধার দেয়ার পরও কোন ভ্রুক্ষেপ না করে দ্রুত গতিতে মোটরসাইকেল চালানো অবস্থায় পিছন দিকে জোরে ধাক্কা দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে ফেলে দিলে লিজা মাটিতে ছিটকে পড়ে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মারা যায়। আমার মেয়েকে নিয়ে পাগল প্রায় থাকা কালীন জন ব্রিগেন মল্লিক ও জীবন্ত হাগিদক আমার ছেলে ওবায়েদুর রহমানের সঙ্গে কথা বলে পরিকল্পিত হত্যার ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য দূর্ঘটনা জনিত মৃত্যু বলে ভূল বুঝিয়ে লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়া তড়িঘড়ি করে আমাকে দিয়ে কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে লাশ দাফন সম্পন্ন করে। এ কারণে দোষীদের শাস্তির দাবিতে আদালতে মামলা করেছি। আমার মেয়ের দাফন শেষে কয়েকদিনপর অফিসে গিয়ে প্রকৃত ঘটনা জানতে পারি। তখন ঢাকায় সংস্থার কান্ট্রি ডিরেক্টর মাইনুদ্দিন মাইনুল হেড অফিসে খবর দিয়ে নেন এবং তিনি এ হত্যাকান্ড নিয়ে আমাদের সাথে সমঝোতার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে কোন প্রকারের অভিযোগ না করতে হুমকি দেন । তাই বাধ্য হয়ে গত ২৪ অক্টোবর আদালতে মামলা করি।

কমলগঞ্জ থানার ওসি তদন্ত সুধীন চন্দ্র দাস মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে কবর থেকে লাশ উত্তোলনের প্রক্রিয়া চলছে। পূণরায় ময়না তদন্তের পর পর্যায়ক্রমে পরবর্তী আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উপজেলা প্রশাসন কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাসরীন চৌধুরী বলেন, ময়নাতদন্তর জন্য আদালতের নির্দেশে ওই তরুণীর লাশ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে।