গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে পরমতসহিষ্ণুতা ও সহাবস্থানের বিকল্প নেই

প্রকাশিত: ৭:১৫ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১, ২০২২

আব্দুর রাজ্জাক রাজা: রাজনীতি একটি পরিশীলিত প্রতিদ্বন্দিতা। দলগুলো পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ এবং সৌহার্দ্য বজায় রেখে আদর্শ ও কর্মসূচি দিয়ে পরস্পরকে মোকাবিলা করবে এটাই কাঙ্খিত। সেখানে বিদ্বেষ-সহিংসতার কোনো জায়গা নেই। সহিংস রাজনীতি কখনোই কারও জন্য মঙ্গল বয়ে আনে না, বরং দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির সম্মুখীন করে। গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে পরমতসহিষ্ণুতা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের কোনো বিকল্প নেই। গণতন্ত্রের পালাবদলে একদল রাষ্ট্রক্ষমতায় যাবে, আরেক দল বিদায় নেবে এটাই রীতি। ক্ষমতা কখনো চিরস্থায়ী নয়। কিন্তু ক্ষমতাসীনদের কৃতকর্ম ইতিহাসে চিরস্থায়ী দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে। আমাদের দেশের রাজনীতিতে অতীতে এমন কিছু খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে, যা আজও উদাহরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। দেশের সাধারণ মানুষ চায় ক্ষমতাসীন কিংবা বিরোধী দল, তারা এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করুক, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে ইতিবাচক উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপনযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। আর যদি এর বিপরীত হয়, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আজকের নেতৃত্বকে ইতিহাসের কাঠগড়ায় এক দিন দাঁড় করাবেই।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে রাজপথ। রাজনৈতিক দল সমুহ পাল্টাপাল্টি কর্মসুচী হাতে নিয়েছে। রাজনৈতিক সংগঠন সমুহের কর্মসুচীকে কেন্দ্র করে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে অজানা আতংক বিরাজ করছে। এমনিতেই দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির জন্য নাভিসাশ্ব চলছে। আবার যদি রাজনৈতিক উতপ্তের কারনে কি হয় সেই শংকায় নাগরিকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ উৎকন্ঠা। আগামী ডিসেম্বরকে টার্গেট করে উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে রাজনীতি। সাম্প্রতিক সময় দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি ৯ বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ করা কর্মসূচী ঘোষনা করেছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি বিভাগীয় সম্মেলন করেছে। সর্বশেষে ১০ডিসেম্বর রাজধানীতে মহাসমাবেশ করবে। অপরদিকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ ও তার া্গং সংগঠন সমুহ বিজয়ের মাসে জাতীয় সম্মেলন সহ নানা ইস্যুতে মাসজুড়ে কর্মসূচি ঘোষনা করেছে। এগুলোর মধ্য দিয়ে বড় শোডাউনের পরিকল্পনাও রয়েছে। এদিকে বিএনপির কয়েকটি সমাবেশের পর ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে একধরনের চিত্ত-চাঞ্চল্য দেখা গেছে। তারা বিএনপির সমাবেশগুলোতে আসা মানুষের সংখ্যা নিয়েও অনাবশ্যক মন্তব্য করেছেন। এমনকি দৃশ্যমান কোনো কারণ ছাড়াই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, বিএনপি যদি আন্দোলন-সমাবেশের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে, তাহলে রাজপথেই তার সমুচিত জবাব দেওয়া হবে। দুই পক্ষের এমন যুদ্ধংদেহী মনোভাবের কারণে সমাবেশকে কেন্দ্র করে ভয়ানক কিছু একটা ঘটার আশঙ্কা করেছেন অনেকেই।

কেউ কেউ অবশ্য বলেছেন, বিএনপির শাসনামলেও আওয়ামী লীগের সমাবেশে বিঘœ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে একই পন্থা অবলম্বন করা হতো। প্রশ্ন হলো, একটি খারাপ কাজের নজিরকে দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থাপন করে আরেকটি খারাপ কাজ জায়েজ করা যায় কি না। এটার কোনো যুক্তি খুঁজে পাওয়া যায় না।

সভা-সমাবেশ করা একটি রাজনৈতিক দলের গণতান্ত্রিক অধিকার। যার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রের সংবিধানে। কেবল রাজনৈতিক সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি প্রসূত অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তে তাদের সেই অধিকারে বিঘœ ঘটানো কারও কাছেই কাম্য নয়। এ সত্যটি আমাদের রাজনীতির নিয়ন্ত্রকেরা যত দ্রæত উপলব্ধি করবেন, ততই মঙ্গল। এমনিতে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারনে দেশের সাধারণ মানুষের পরিবারের আয় আর ব্যয়ের মধ্যে কোনো সামঞ্জস্য নেই বর্তমানে। সাধারণ মানুষ হাহাকার করে তাদের ক্ষুধা নিবারণের জন্য। অধিকাংশের ক্ষুধা বাড়তে থাকলে কিছু মানুষের হাতে টাকা থেকে তেমন লাভ নেই। টাকাকে সবার মধ্যে বিতরণ করে কিভাবে উৎপাদনমুখী খাত তৈরি করা যায়, সেটিই এখন ভেবে দেখার বিষয়। মানুষের এই যখন অবস্থা তখন রাজনৈতিক দল গুলোকে মানুষের মৌলিক অধিকার অন্ন ,বস্ত্র ,বাসস্থান ,শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থা নিবিঘœ করার দিকে দৃষ্টি দেয়া একান্ত প্রয়োজন। মানুষই ক্ষমতায় টিকে থাকার বা ক্ষমতায় যাওয়ার সোপান। মানুষই যদি না থাকে তবে কিভাবে ক্ষমতায় থাকবেন বা ক্ষমতায় আরোহন করবেন ? এই যখন অবস্থা তখন সাধারণ নাগরিকদের উদ্বেগ উৎকন্ঠায় রেখে কি লাভ ? আশা করি উভয় দলই সহনীয় মনোভাব দেখিয়ে দেশে স্থিতিশীল অবস্থা বজায় রাখবে। তবেই দেশের কল্যান হবে এবং মানুষ শান্তিতে থাকবে।

লেখক: আব্দুর রাজ্জাক রাজা, সিনিয়র সাংবাদিক ও লেখক।