চা বাগানের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের বাদ দিয়ে প্রকাশিত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সরকারি গেজেট বতিলের দাবিতে কমলগঞ্জে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা
কমলগঞ্জ সংবাদদাতা: চা বাগানে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের বাদ দিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত সরকারি গেজেট বাতিলের দাবিতে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের শমশেরনগর চৌমুহনায় অবস্থান নিয়ে মানববন্ধন কমূসূচি পালনসহ প্রতিবাদ সভা করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন বিশ্ব বিদ্যালয়ে পড়–য়া চা শ্রমিক সন্তানদের সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় চা ছাত্র সংসদের আয়োজনে শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় এক মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মোহন রবিদাসের সঞ্চালনায় মানববন্ধন কর্মসূচি ও প্রতিবাদ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রাম ভজন কৈরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চা শ্রমিক ইউনিয়নের মনু ধলাই ভেলীর সভাপতি ধনা বাউরী, সাধারণ সম্পাদক নির্মল দাশ পাইনকা ও চা মজদুর পত্রিকার সম্পাদক সীতারাম বীন। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, শমশেরনগর চা বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোপাল কানু, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মিখা পিরেগু, জগন্নাথ বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কৃষ্ণ রাজভর, সত্য নারায়ন নাইডু, আপন নাইডু প্রমুখ। মানবন্ধন ও প্রতিবাদ সভা চলাকালে শমশেরনগরে বড় ধরনের ট্র্যাফিক জ্যামের সৃষ্টি হয়। এসময় শমশেরনগর পুলিশ সদস্যরা যান চলাচল স্বাভাবিক করতে হিমশিম খেতে হয়েছে।
প্রতিবাদ সভায় বক্তারা বলেন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে চা শিল্পের বড় ভূমিকা রয়েছে। আর এর শিল্পের প্রাণ হচ্ছে চা শ্রমিক। চা বাগানগুলোতে বাউরী, তেলেগু, রবিদাস, তাঁতি, কাহার,নায়েক ,কৈরীসহ ৯৫টি ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠীর বসবাস। তাদের প্রত্যেকের ভাষা, সংস্কৃতি,আচার-আচরণ, ধর্মীয় রীতিনীত, পূজা উৎসব, বিবাহ প্রথা, সমাজ কাঠামো দেশের মূল জগোষ্ঠী থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। নৃ-তাত্ত্বিক সংঘানুসারে চা বাগানের এসব ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কেউ প্রাক দ্রাবিড়ীয়, কেউ আদি অষ্ট্রালয়েড, কেউবা মঙ্গোলীয় আদিবাসীর অন্তুর্ভুক্ত। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় চা বাগানের ৯৫টি ক্ষুদ্র নু-গোষ্ঠীদের তালিকা সরকারি স্বীকৃতি (গেজেটভুক্ত) দেয়ার লক্ষ্যে একটি একাডেমিক কমিটিও গঠন হয়েছিল। গত এক বছর যাবত চা বাগানে গবেষনাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে এবং শেষ মুহূর্তে চা বাগানের সকল ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের গেজেভুক্ত করতে সম্মতি প্রদান করে।
আশ্চর্যজনক যে সম্প্রতি ক্ষদু নৃ-গোষ্ঠীদের যে সরকারি গেজেট প্রকাশিত হয়েছে তাতে চা বাগানের এসব ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদেরকে বাদ দেয়া হয়েছে। চা শ্রমিকরা মনে করেন কোন যৌক্তিক কারণ ছাড়াই চা বাগানের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদেরকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় গেজেট থেকে বাদ দিয়ে শুধু চা শ্রমিকদের সাথে প্রতারনাই করেনি বরং চা বাগানের ভাষা সংস্কৃতি বিলুপ্ত হয়ে যাবার হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। এখন চা শ্রমিকদের একটাই দাবি যাতে অবিলম্বে এই ষড়যন্ত্রমূলকভাবে প্রকাশিত ক্ষুদ নৃ-গোষ্ঠীর সরকারি গেজেট বাতিল করা হয় এবং চা বাগানের ৯৫টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদেরকে অন্তর্ভুক্ত করে পূনরায় নতুন গেজেট প্রকাশ করা হয়। অন্যতায় দেশের দুই শতাধিক চা বাগানের চা শ্রমকিরা আগামীতে বড় ধরনের আন্দোলন শুরু করতে বাধ্য হবে। এ দাবি নিয়ে ১৪ জুন শ্রীমঙ্গলে বড় ধরণের বিক্ষোভ মিছির করবে বিশ্ববিদ্যালয় চা ছাত্র সংসদ বরে ঘোষনা দেওয়া হয় প্রতিবাদ সভা থেকে।