প্রবাসীর স্ত্রী কবুতর পোষেন গরিবের চাল দিয়ে!

প্রকাশিত: ১২:০৬ পূর্বাহ্ণ, মে ২৪, ২০১৯

ডেস্ক রিপোর্ট: ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির (ভিজিডি) চাল দিয়ে কবুতর পোষেন সৌদি আরব প্রবাসী মো. মাহবুবের স্ত্রী জেসমিন আক্তার (৩৩)। তিনি উপজেলার সদর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। তাকে এক বছরের জন্য ভিজিডি কার্ড বরাদ্দ দিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি।

জেসমিন আক্তার প্রতি মাসে ১০ টাকা দরে ৩০ কেজি চাল তুলে তার শতাধিক কবুতরকে খাওয়ান। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সম্প্রতি একই এলাকার দরিদ্র নান্নু হাওলাদার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, জেসমিন আক্তার নিজেদের পাকা বাড়ির ছাদে কবুতর পোষেন। তার বিভিন্ন প্রজাতির শতাধিক কবুতর রয়েছে। এছাড়া কৃষিজমি, বাগান ও ব্যাংকে নগদ টাকাসহ দুই ইউনিটের একটি পাকা বাড়ির মালিক। এরপরও জেসমিন আক্তারের নামে ভিজিডির কার্ড বরাদ্দ দিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি। উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেনও একটি দোতলা পাকা বাড়ির মালিক। তাকেও ভিজিডি কার্ড দেয়া হয়েছে।

অপরদিকে উপজেলার সদর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা হতদরিদ্র বিধবা কোহিনুর বেগম (৫০) একাধিকবার আবেদন করলেও তার ভাগ্যে ভিজিডির কার্ড বা অন্য কোনো সরকারি সহায়তা জোটেনি। তিনি উপজেলা সদরের হোটেল-রেস্তোরাঁয় পানি সরবরাহ করেন। এতে যা রোজগার হয় তা দিয়ে কোনোমতে ভাঙা ঘরে দিন কাটান তিনি।

একই ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও করাতকল শ্রমিক নজরুল ইসলামও (৪৮) একাধিকবার আবেদন করেও সরকারি কোনো সহায়তা পাননি। সুবিধাবঞ্চিতরা বলছেন, টাকা দিতে না পারলে সরকারি সহায়তা মেলে না। যারা টাকা দিতে পারে, তাদেরই জনপ্রতিনিধিরা ভিজিএফ ও ভিজিডির কার্ড দেন।

উপজেলা সদরের সাবেক অধ্যক্ষ শাহজাহান মোল্লা বলেন, দরিদ্র মানুষদের ভালো রাখতে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় বহু কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সরকার। অথচ কিছু লোভী ও দুষ্ট লোকের স্বজনপ্রীতির কারণে প্রকৃত দরিদ্রদের কাছে সরকারের সহায়তা পৌঁছে না। ফলে সরকারের মহতী উদ্যোগ বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এই দুষ্টরা রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে সরকারের বদনাম করছে। এসব সুবিধাবাদীকে চিহ্নিত করা প্রয়োজন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মৃধা মজিবর বলেন, ১ নম্বর ওয়ার্ডের মাহাবুব দীর্ঘ ১৫ বছর প্রবাসে থাকলেও এক বছর ধরে তিনি দেশেই অবস্থান করছেন এবং বর্তমানে তার অবস্থা ভালো না। তাই তাকে ভিজিডির কার্ড দেয়া হয়েছে। এছাড়া ৮ নম্বর ওয়ার্ডের আনোয়ার হোসেনকে দলীয় বিবেচনায় কার্ড দেয়া হয়েছে।

হতদরিদ্রদের তালিকা থেকে বাদ দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শত শত কার্ড দিতে গিয়ে একটু ভুল হতেই পারে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সোহাগ হাওলাদার বলেন, ভিজিডির তালিকায় বিত্তবানদের নাম আসার বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি মহিলা বিষয়ক অধিদফতরকে তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমি নিজেও এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছি। তালিকা থেকে বিত্তবানদের নাম বাদ দিয়ে দরিদ্রদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হবে।