মর্গে জায়গা হয়নি, এসি রুমে পচে গিয়েছিল ২৬ বাংলাদেশির লাশ

প্রকাশিত: ১২:১৩ পূর্বাহ্ণ, মে ৩১, ২০২০

ধলাই ডেস্ক: হাসপাতাল মর্গে জায়গা না হওয়ায় এসি রুমে রাখা হয়েছিল লিবিয়ায় মানবপাচারকারী ও মিলিশিয়াদের গুলিতে নির্মমভাবে নিহত বাংলাদেশিদের লাশগুলো। গলে যাচ্ছিল এসব মরদেহ। বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃপক্ষ সেখানে পৌঁছাতে পারেনি। আবার মিলিশিয়াদের চাপ ছিল লাশগুলো যাতে ওই শহরের বাইরে নিয়ে না যাওয়া হয়। ফলে বাধ্য হয়েই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসন মরদেহগুলো ওই শহরেই দাফন করে ফেলে। শুক্রবারেই (২৯ মে) ২৬ বাংলাদেশির লাশ লিবিয়ার মিজদাহ শহরের কবরস্থানে দাফন করা হয়।

বাংলাদেশ দূতাবাস ও স্থানীয় বাংলাদেশি কমিউনিটি এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সূত্র জানায়, লিবিয়ার যে শহরে ২৬ বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করা হয়, সেই যুদ্ধবিধ্বস্ত মিজদাহ শহরে ভালো কোনো হাসপাতাল নেই। আহত ১১ জনকে স্থানীয়দের সহায়তায় অন্য শহরে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে বাংলাদেশ দূতাবাস। কিন্তু লাশগুলো পড়ে থাকে সেখানে।

হাসপাতালের মর্গে মাত্র চারটি লাশ রাখার জায়গা ছিল। ফলে ২৬টি লাশ রাখার কোনো ব্যবস্থায়ই সেখানে ছিল না। ফলে বাধ্য হয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের একটি এসি রুমে ২৬টি লাশ রেখে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের অপেক্ষা করতে থাকে। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে সেখানে পৌঁছাতে পারেনি বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা।

এদিকে লাশগুলো পচে-গলে যেতে থাকলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসন সেগুলো ওই শহরেই দাফন করে ফেলে।

দূতাবাসের শ্রমবিষয়ক কাউন্সিলর অশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘‌হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের সহায়তায় লাশগুলো দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।’

লিবিয়ায় অবস্থানরত কয়েকজন বাংলাদেশি জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অপেক্ষা করলেও সেখানে দূতাবাসের কোনো কর্মকর্তা পৌঁছাতে পারেননি। এদিকে এতগুলো লাশ নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিল ওই হাসপাতাল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাংলাদেশি বলেন, ‌‘লাশ রাখতে হয় মর্গে। সেখানে স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় তারা হাসপাতালের একটি এসিকক্ষ যতটা সম্ভব ঠান্ডা করে সেখানে লাশগুলো রাখে। কিন্তু তাতে কি লাশের পচন ঠেকানো যায়? বাধ্য হয়ে তারা দাফনের ব্যবস্থা করেছে।’

এ বিষয়ে আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‌আসলে লাশগুলো মিজদাহ শহরে দাফন করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। মিজদাহ খুবই ছোট অনুন্নত শহর। সেখানে লাশগুলো সংরক্ষণের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থাও নেই। এছাড়া যুদ্ধ-কবলিত এলাকা হওয়ায় এবং লিবিয়ার জাতিসংঘ-সমর্থিত সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরের এলাকা হওয়ায় রাজধানী ত্রিপোলির সঙ্গে মিজদাহ শহরের যোগাযোগের ব্যবস্থাও বেশ খারাপ। এ কারণেই সেখানে যাওয়া সম্ভব হয়নি বলে জানান তিনি।

তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দূতাবাস নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছে বলে জানান দূতাবাসের শ্রমবিষয়ক কাউন্সিলর অশরাফুল ইসলাম।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (২৮ মে) সকালে লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলি থেকে ১৮০ কিলোমিটার দক্ষিণের মিজদাহ অঞ্চলে অপহরণকারীদের গুলিতে ২৬ জন বাংলাদেশি নিহত হন।  আহত হন আরও ১১ জন বাংলাদেশি। তারা সবাই অবৈধভাবে লিবিয়া হয়ে ভূমধ্যসাগর পারি দিয়ে ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন।

 

সূত্র: জাগো নিউজ…