সিলেটে বন্যার পানি বাড়ছে, কোথাও অপরিবর্তিত

প্রকাশিত: ১০:৫০ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৩, ২০২০
সংগৃহীত

ধলাই ডেস্ক: সিলেটে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীতে কোথাও বন্যার পানি বাড়ছে আবার কোথাও অপরিবর্তিত রয়েছে। সিলেট জেলার তিন নদীর চারটি পয়েন্টে পানি বেড়েছে আর দুটি পয়েন্টে সামান্য কমেছে।

সুরমা নদীর পানি না কমায় সিলেট নগরের নিম্নাঞ্চলে বন্যার পানি অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে নগরে নতুন করে পানি ঢুকছে না। বৃষ্টির পানি ড্রেন দিয়ে নদীতে না নামায় সিলেট নগরের অন্তত অর্ধশতাধিক এলাকার রাস্তা ও বাসা-বাড়িতে এখনও পানি জমে আছে। নগর থেকে পানি না নামায় বিপাকে রয়েছেন নগরবাসী।

এছাড়া পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির কারণে সিলেটের অন্তত পাঁচ উপজেলার মধ্যে গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাটে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। বাকি তিন উপজেলা কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর ও সিলেট সদরে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। এ কারণে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন পানিবন্দি মানুষজন।

এর মধ্যে গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলা সদরে নৌকা চলাচল করছে। বন্ধ হয়ে গেছে উপজেলার সাথে সড়ক যোগাযোগও। তবে, বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সদরের বাসাবাড়িতে ও সরকারি অফিসে পানি ঢুকেছে। একই সাথে হাটবাজার বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।

ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে এরই মধ্যে সিলেট জেলার সুরমা, কুশিয়ারা ও সারি নদীর চারটি এলাকায় পানি এখনও বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে প্লাবিত হয়েছে কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর ও সদর উপজেলাসহ সিলেটের নিম্নাঞ্চল।

তবে গতরাতে সিলেটে বৃষ্টির পরিমাণ কম হলেও উজানে বৃষ্টির কারণে সবগুলো নদীর পানি কিছুটা বেড়েছে। যে কারণে অন্য এলাকার সাথে সিলেট নগরের তালতলা, সোবহানিঘাট, মেন্দিভাগ, উপশহর, যতরপুর, সবুজভাগ, ঘাসিটুলা, শামিমাবাদ, শাহজালাল উপশহর, তেরতন ও সাদিপুর, মাছিমপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় এক থেকে পানি রয়েছে।

আবহাওয়া অফিসের দেয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ৯ সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সুরমা, কুশিয়ারা ও সারি নদীর পানি প্রায় সবকটি পয়েন্টেই বেড়েছে। এর মধ্যে সকাল ৯টায় কানাইঘাটে সুরমার পানি ছিল বিপৎসীমার ৭১ সেন্টিমিটার উপরে। দুপুর ১২টায় তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৭ সেন্টিমিটার। সুরমার সিলেট পয়েন্টে সকাল ৯টায় পানি ছিল বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার উপরে।

দুপুর ১২টায় তা এক পয়েন্ট কমে এসেছে ৮ সেন্টিমিটারে। ফেঞ্চুগঞ্জে সকাল ৯টায় কুশিয়ারার পানি ছিল বিপৎসীমার ৩৯ সেন্টিমিটার উপরে। দুপুর ১২টায় তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ সেন্টিমিটারে। জৈন্তাপুরের সারিঘাটে ৯টায় পানি ছিল বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার উপরে। দুপুর ১২টায় তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ সেন্টিমিটারে। এছাড়া সিলেটে ৪টি পয়েন্টেও পানি বেড়েছে।

এদিকে মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে দ্বিতীয় দফা বন্যায় নষ্ট হয়ে গেছে ক্ষেতের ফসল, তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট, বাড়ি-ঘর। ফলে বন্যাকবলিত এলাকার লাখো মানুষ এখন দিশেহারা। এর মাঝে বৃষ্টি নিয়ে কোনো স্বস্তির খবরও নেই আবহাওয়া অফিসের কাছে।

সিলেটের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী জানান, সিলেটে টানা বৃষ্টি হবে আরও সপ্তাহ পর্যন্ত। তবে পরিমাণ কিছুটা কমবে। মূলত উজানে ভারতের মেঘালয় ও আসামের বৃষ্টিই সিলেটে বেশি প্রভাব ফেলছে বলে তিনি জানান।

আর পূর্বাভাস অনুযায়ী উজানের বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে ফের ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

পানি উন্নয়ন বোর্ড, সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শহীদুজ্জামান সরকার জানান, মাঝে মাঝে দু’একটা পয়েন্টে বন্যার পানি কিছুটা কমলেও বেশিরভাগ পয়েন্টে পানি বাড়ছে। এতে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। এভাবে উজানের বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে ফের বড় বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।