অবশেষে দেশে ফিরল, ভারতে পাচার হওয়া ৬ কিশোরী

প্রকাশিত: ৯:৪১ অপরাহ্ণ, জুন ১৬, ২০১৯

ডেস্ক রিপোর্ট: দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাচার হওয়া বাংলাদেশি ৬ কিশোরীকে ফেরত দেয়া হয়েছে। রোববার দুপুরে পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে বিজিবি এবং বিএসএফের সহযোগিতায় ভারতের বেসরকারি সংস্থা ইমপালস এনজিও নেটওয়ার্ক, শিলং এর প্রতিনিধিরা তাদের বাংলাবান্ধা জিরো লাইনে নিয়ে আসেন।

এ সময় বাংলাদেশের বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের মানবাধিকার আইন সহায়তা কর্মসূচির প্রতিনিধিরা তাদের কাছ থেকে পাচারের শিকার কিশোরীদের গ্রহণ করেন।

এ সময় পঞ্চগড় ১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক মোহাম্মদ এরশাদুল হক, ভারতের ৫১ ব্যাটালিয়ন বিএসএফ কমান্ড্যান্ট শ্রি কে উমেশ, তেঁতুলিয়া মডেল থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মো. জহুরুল ইসলাম, ব্র্যাক মানবাধিকার আইন সহায়তা কর্মসূচির পরিচালক ব্যারিস্টার এসকে জেনেফা জব্বার, প্রধান ব্যবস্থাপক শাহারিয়ার সাদত, ব্র্যাকের ঠাকুরগাও জেলা ব্যবস্থাপক রিপন কুমার সাহা, ব্র্যাকের জেলা প্রতিনিধি মো. গোলাম মোস্তফাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

পাচারকৃত বাংলাদেশি ৬ নারীর বাড়ি নরাইল, খুলনা, পটুয়াখালী, খাগড়াছড়ি, বাগেরহাট এবং যশোর জেলার বিভিন্ন এলাকায়। এদের একজন এক বছর, তিনজন ৪ বছর এবং অন্যরা প্রায় ৭ বছর আগে বিভিন্নভাবে ভারতে পাচার হয়েছিলেন। এদের মধ্যে একজন অপহরণের শিকার হয়ে পাচারের মাধ্যমে ভারতে প্রবেশ করে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়।

বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক সূত্র জানায়, চাকরিসহ বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ওই কিশোরীদের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন সময়ে ভারতে পাচার করা হয়েছিল। বিভিন্নস্থানে খোঁজাখুঁজি করেও পরিবারের লোকজন তাদের পাননি। গত বছর পুলিশ ভারতের চেন্নাইয়ের একটি বাড়ি থেকে তাদের উদ্ধার করে চেন্নাইয়ের একটি সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে হস্তান্তর করে। পরে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ের ইমপালস এনজিও নেটওয়ার্ক নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশের বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের মানবাধিকার আইন সহায়তা কর্মসূচির মাধ্যমে কিশোরীদের বাংলাদেশের নাম পরিচয় ও ঠিকানা নিশ্চিত করা হয়।

বছরজুড়ে চিঠি চালাচালির পর রোববার উভয় দেশের দুই বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে তাদের বাংলাদেশে ফেরত আনা হয়। রোববার বিকেলে তেঁতুলিয়া মডেল থানায় আইনি প্রক্রিয়া শেষে উদ্ধাকৃত কিশোরীরা তাদের পরিবারের সঙ্গে মিলিত হওয়ার সুযোগ পান। দীর্ঘদিন পরে হারানো সন্তানদের ফিরে পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন অভিভাবকরা।

এর আগে তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মকর্তা ডা. আজাদের নেতৃত্বে চিকিৎসকদের একটি প্রতিনিধি দল উদ্ধারকৃত কিশোরীদের ডাক্তারি পরীক্ষা করেন।

উদ্ধারকৃত এক কিশোরীর মা বলেন, প্রায় ৭ বছর আগে আমার ১২ বছর বয়সী মেয়েকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ভারতে পাচার করা হয়। দীর্ঘদিন মেয়ের কোনো খোঁজ পাইনি। আজ আমার মেয়েকে আমি ফিরে পেলাম। কত দিন তাকে দেখি না। আমি বোঝাতে পারবো না, আমার কতটা ভালো লাগছে। তবে আমরা চাই পাচারচক্রের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের গ্রেফতার করে বিচারের ব্যবস্থা করা হোক।

তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মকর্তা ডা. আজাদ বলেন, প্রাথমিকভাবে তাদের যথাযথ চেকআপ করা হয়েছে। বিশেষ পরীক্ষার জন্য তাদের রক্তের স্যাম্পল গ্রহণ করা হয়েছে। পরবর্তীতে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকে এ বিষয়ে রিপোর্ট দেয়া হবে।

তেঁতুলিয়া মডেল থানা পুলিশের ওসি জহুরুল ইসলাম বলেন, বিজিবি ও বিএসএফের সহযোগিতায় ৬ কিশোরীকে ভারতের একটি এনজিও বাংলাদেশের একটি এনজিও প্রতিনিধিদের কাছে হস্তান্তর করে। কিশোরীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং আইনি প্রক্রিয়া শেষে তাদের অভিভাবকদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

ব্র্যাক মানবাধিকার আইন সহায়তা কর্মসূচির পরিচালক ব্যারিস্টার এসকে জেনেফা জব্বার বলেন, ইমিগ্রেশনের প্রয়োজনীয় কাজ এবং মেডিকেল চেকআপ শেষে তাদের থানায় নেয়া হয়। সেখানে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া শেষে পাচার হওয়া কিশোরীদের তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তরের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এর আগে তাদের যথাযথ কাউন্সিলিং করা হবে।