শ্রীমঙ্গল সংবাদদাতা: শিক্ষাক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা চা শ্রমিক সন্তানদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে বিশেষ কোটা বরাদ্দের দাবি জানিয়েছে চা জনগোষ্ঠি থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিনিধিত্বশীল নেতৃবৃন্দ ও সিলেটের সুশিল সমাজ। শনিবার সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সদস্য মো: আব্দুস শহীদ এমপিকে সাথে সাক্ষাৎ করে এই দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি পেশ করেন তারা।
স্মারকলিপি প্রদানের সময় মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলা শহরে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সদস্য মহোদয়ের বাসভবনে এক সংক্ষিপ্ত আলোচনায় মিলিত হন এই প্রতিনিধিত্বশীল নেতৃবৃন্দ। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালিঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রানেশ গোয়ালার নেতৃত্বে উত্তরণ বাংলাদেশ ও চা ছাত্র যুব পরিষদের মাধ্যমে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় কালিঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রানেশ গোয়ালার বলেন, আমরা চা শ্রমিক জনগোষ্ঠী ব্রিটিশ আমল থেকে এদেশে বসবাস করে আসছি। কিন্তু উন্নয়নের মূল ¯্রােতধারা থেকে অনেক পিছনে। বাংলাদেশের মধ্যে সিলেট বিভাগ শিক্ষায় পিছিয়ে থাকার অন্যতম প্রধান কারণ চা জনগোষ্ঠী। সিলেট বিভাগের চা বাগানগুলোতে শিক্ষার দুরবস্থা দেখলে এটি স্পষ্ট হয়।
সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চা শ্রমিক সন্তানদের বিশেষ কোটা দেয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সিলেটের পরিচয়ই হচ্ছে চা বাগান। কিন্ত এই চা চাষের শ্রমিকরা দেড়শ বছর ধরে যাপন করছে মানবেতর জীবন। তাদের সন্তানরাও পাচ্ছে না উপযুক্ত শিক্ষার সুযোগ। এ থেকে উত্তরণের মূল উপায় হচ্ছে শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ সুযোগ সুবিধা।
স্বপ্নকুঁড়ি সমাজ কল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বিজয় রুদ্র পাল বলেন, অনেক আন্দোলনের পর শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ে কোটা পদ্ধতি চালু হয়। চা শ্রমিকদের মেধাবী নারী শিক্ষার্থীদের জন্য এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন বিশেষ কোটা পদ্ধতি চালু করেছে। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভারসিটি অফ বিজনেস এগ্রিকালচারাল এন্ড টেকনোলজিতেও গত শিক্ষাবর্ষ থেকে চা শ্রমিক সন্তানদের জন্য কোটা পদ্ধতি চালু হয়েছে। সিকৃবিতে একই দাবীতে আমরা এসেছি।
উত্তরন বাংলাদেশের সভাপতি মিঠুন কুর্মী বলেন, চা জনগোষ্ঠী উন্নয়নে শিক্ষার বিকল্প নাই। এ জন্যই কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ে যদি কোটা পদ্ধতি চালু হয় তাহলে চা শ্রমিক সন্তানদের শিক্ষাক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করি।
তিনি বলেন, চা বাগানে গুটি কয়েক শিক্ষার্থী কলেজে পড়ে তাও আর্থিক অভাবে অনেকে ঝরে পড়ছে। এ ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা না দেওয়া হলে ভবিষতে চা বাগানে শিক্ষার হার শূণ্যের কোঠায় যেতে পারে। এজন্যই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে চা বাগানের বিষয়টি বিশেষ দৃষ্টিতে আনতে হবে।
চা ছাত্র যুব পরিষদের সভাপতি আহ্বায়ক প্রদীপ পাল বলেন, চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরী ১০২ টাকা। এ অর্থ দিয়ে মৌলিক অধিকারই পুরণ করা সম্ভব নয়। যার কারণে শিক্ষায় চা শ্রমিকরা এত পিছিয়ে।
স্মারকলিপি প্রদানের সময় সিলেট কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের সদস্য মো: আব্দুস শহীদ এমপি বলেন, কাউকে পিছনে ফেলে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন করা সম্ভব নয়। এজন্যই আমরা চা শ্রমিক সন্তানদের জন্য বিশেষ কোটা চালু করার বিষয়ে বিভিন্ন সভায় আলোচনা করব।
স্মারকলিপি গ্রহনকালে তির্নি চা শ্রমিক সন্তানদের শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ সুযোগ প্রদানের দাবির সাথে একাত্মতা জানিয়ে সিন্ডিকেট সভায় বিষয়টি তোলার আশ্বাস দেন।
স্মারকলিপি প্রদান অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উত্তরণ বাংলাদেশের কোষাধক্ষ্য অর্পিতা রায়,প্রচার সম্পাদক রঞ্জিত চাষা, তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক গোনেশ পাশি, সহ আইসিটি সম্পাদক রাজু দুষাদ, সহ সাংঘটনিক সম্পাদক রিয়া সাহা, চা ছাত্র যুবক পরিষদের সদস্য সচিব সজল কইরি, যুগ্ম সম্পাদক বাবুল দাশ,রিয়াজ আহম্মেদ প্রমূখ ।