
ছবি ধলাইর ডাক
✍ নজরুল ইসলাম: লেখাটি শুরু করার পূর্বে COVID-19 করোনা ভাইরাস মহামারীতে আমরা কোথায় আছি জেনে নেই। করোনাভাইরাসে দেশে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ নিয়ে দেশে করোনা মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৯৯ জন। এর আগে দুপুর আড়াইটার নিয়মিত অনলাইন স্বাস্থ্য বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৫ হাজার ৮৬৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো এক লাখ পাঁচ হাজার ৫১৩টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় আরও ৭০৬ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশে মোট আক্রান্ত হয়েছেন
১২ হাজার ৪২৫ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও ১৩০ জন। সব মিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ৯১০ জন।
COVID-19 করোনা ভাইরাস মহামারীর সাথে বাংলাদেশে ক্ষুধা দারিদ্রতা অনেকটা সাঙ্গর্ষিক রূপ ধারণ করছে। আমাদের সীমাবদ্ধতা আছে, এই মহামারীর কোন টাইম ফ্রেইম নেই। সমাজের দানশীল যারা এগিয়ে এসেছেন তারা এই ধারাবাহিকতা কতটুকু অব্যাহত রাখতে পারবেন তা নোট করতে হবে। তাই শুরু থেকে যদি ত্রাণ বিতরণকে শৃঙ্খলায় নিয়ে না আসা যায় তাহলে আমাদের লোক মারা যাবে অনাহারে।
জাতীয় ও বৈশ্বিক বিপর্যয় কোভিড -১৯ করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় বাংলাদেশ অবিশ্বাস্য কাজ করছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দায়িত্বে থাকাটা দেশের মানুষের সৌভাগ্যের ব্যাপার। তিনির নেতৃত্ব রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দূরদর্শিতা নিয়ে জনমনে নেই কোন শঙ্কা। তিনি অবিশ্বাস্য কাজ করছেন। দেশের জনগণ ও কর্তা ব্যক্তি দায়িত্বশীলদের কাজ থেকে তিনি যে পরিমাণ সহযোগিতা পাবার কথা তা পাচ্ছেন না বলে মনে হচ্ছে।
বাংলাদেশে এই মহামারীকে মোকাবেলা করতে গিয়ে অনেক প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে যা দিনের পর দিন এর অবনতি হচ্ছে। শেষ ফলাফল হয়ত অনেক ভয়ঙ্কর। তখন আমরা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখব কিছু করার থাকবে না। তাই আমাদের মধ্যে আরো সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এই ভাইরাসের ভয়াবহতা নিয়ে ইতিমধ্যে জনগণকে সচেতন করার চেষ্টা হয়েছে, তবে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অনিশ্চিত। মহামারীর সাথে ক্ষুধা দারিদ্রতা অনেকটা সাঙ্গর্ষিক রূপ ধারণ করছে। যতক্ষণ না পর্যন্ত ভাইরাস আমাদের সংক্রমিত করছে ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের লোকজনের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হচ্ছে না। ইহা আমাদের লোকদের একটি সহজাত অভ্যাস যা আমাদের জন্য অশনি সংকেত।
বাংলাদেশে COVID-19 করোনা ভাইরাস বিপদ সীমার উপর দিয়ে অতিক্রম করছে, ক্রমেই এই সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশে এই ভাইরাস যে কমিউনিটি স্প্রেড হয়নি তাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। সরকারের দেওয়া গাইডলাইন মেনে ভাইরাসটিকে আমরা মোকাবেলা করবো। পাশাপাশি দরিদ্র অসহায় লোকজন যাতে অনাহারে মারা না যায় সেই চিন্তা করতে হবে। থাকতে হবে একটি ইউনিক পরিকল্পনা। এই মহামারী এক/ দুই মাসে শেষ হচ্ছে বলা যাচ্ছে না। কখন শেষ হবে তাও অনিশ্চিত। ব্যক্তি পর্যায়ে যারা দান করছেন তারা একবার দান করার পর দ্বিতীয় বার আবার দান করা সম্ভব হবে কি না সে প্রশ্ন আমাদের মাথায় রাখতে হবে।
একটা উদাহরণ টানছি, আমরা পারিবারিক ভাবে গেল সপ্তাহে সামান্য সাহায্য করেছি এই সপ্তাহে করতে পারছি না, আগামী সপ্তাহে করতে পারবো কিনা অনিশ্চিত। এই মহামারি বাংলাদেশে কত দিন চলমান থাকবে তা আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন-ই জানেন। তাই তা মোকাবেলায় পরিকল্পনা শৃঙ্খলা সমন্বয় অপরিহার্য। সর্ব প্রথমে যা প্রয়োজন সকল রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের সমন্বয়ে COVID-19 করোনা ভাইরাস বাংলাদেশ জাতীয় মহাদুর্যোগ ঘোষণা করতে হবে। স্লোগান তুলতে হবে ‘দেশ আমাদের জনগণ আমাদের, তাদের রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের’। সরকারি ত্রাণ নিয়ে যে সব অনিয়ম হচ্ছে তার আশু সমাধানকল্পে স্বচ্ছতা নিশ্চিতে যোগপযোগি ও পরিস্থিতির সাথে সহায়ক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। প্রতিটি ইউনিয়নে একটি ইউনিক ত্রাণ তহবিল থাকবে। উক্ত ইউনিয়নের জন্য সরকার কর্তৃক বরাদ্দকৃত ত্রাণের সাথে যুক্ত হবে সমাজের দানশীলদের ত্রাণ যা একই ত্রাণ তহবিলে স্টক থাকবে। বিচ্ছিন্নভাবে কাজ না করে আনুষ্ঠানিক ভাবে সমাজের দানশীলদের আহ্বান জানানো মানবিক কারণে পরিকল্পনা অনুযায়ী এই মহামারি মোকাবেলায় সবাই এগিয়ে আসা ও ইউনিয়ন ত্রাণ ফান্ডে দান অব্যাহত করা।
একটি ইউনিয়নকে দিয়ে কাল্পনিক রূপরেখা- যেমন মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জের ২নং পতন উষার ইউনিয়নে আমরা কীভাবে কাজ করতে পারি।
ইহা কিভাবে সম্ভব আপনাদের মনে প্রশ্ন উঁকি দিবে। আপনাদের সম্ভাব্য প্রশ্ন ও তার উত্তর।
COVID-19 করোনা ভাইরাস জাতীয় মহাদুর্যোগ ইউনিয়ন ত্রাণ কমিটি।
#প্রশ্ন: কে হবেন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ?
✅ প্রধান সমন্বয়ক হবেন একজন সেনাবাহিনী অফিসার
#প্রশ্ন: তিনির সাথে কে থাকবেন ?
✅ কো: সমন্বয়ক হবেন সম্মানিত ইউপি চেয়ারম্যান।
প্রশ্ন: কমিটির সদস্য কে থাকবেন ?
✅ ইউনিয়নের সকল কাউন্সিলর বৃন্দ, স্থানীয় সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও সকল রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি।
#প্রশ্ন: কিভাবে ত্রাণ বণ্টন হবে ?
✅ প্রতিটি ইউনিয়নে দরিদ্র মানুষের তালিকা আছে , সেই তালিকা অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে সুষ্ঠু বণ্টন হবে।
প্রশ্ন: তালিকার বাহিরে মধ্যবিত্তরা কি করবে ?
✅ ইউনিয়নের সেক্রেটারি বা সাময়িক নিয়োগ প্রাপ্ত যে কাউকে দায়িত্ব দিতে হবে। দায়িত্ব প্রাপ্তের একটা ইউনিক মোবাইল ফোন নাম্বার️ 0177****** থাকবে যা #হটলাইন হিসাবে বিবেচিত হবে। চেয়ারম্যান সাহেব সামাজিক মাধ্যমে ও জনপ্রতিনিধিদের দিয়ে ইউনিয়নের সকল নাগরিকদের জানিয়ে দিবেন হটলাইন নাম্বারটি। যা সামাজিক মাধ্যমে ৫ মিনিটেই সকলের বাড়িতে নাম্বারটি চলে যাবে। এই নাম্বারেই ত্রাণের জন্য যে কেহ ফোন দিবে, নাম রেজিস্টার হবে , ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মেম্বারবৃন্দ সিদ্ধান্ত দিবেন সে পাবে কি পাবে না।
#প্রশ্ন: সবাইকে কি দেওয়া সম্ভব ?
✅ সেটা বিবেচনা করবে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মেম্বার। যিনি ফোন দিয়েছেন তার অবস্থা বিবেচনা করে যদি পরিষদ মনে করে তখনই বিবেচিত হবেন। ব্যক্তিগতভাবে চেয়ারম্যান মেম্বার সবাইকে চিনেন। তারা যদি মনে করেন তিনিকে সাহায্য দেওয়া প্রয়োজন তাহলে প্রধান সমন্বয়কের সাথে সমন্বয় করে দিবেন।
#প্রশ্ন: এই ত্রাণ বণ্টন কাজটি কে করবে ?
✅ সম্মানিত চেয়ারম্যান ও তার পরিষদ, স্থানীয় সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও সকল রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, স্বেচ্ছাশ্রম সমাজকর্মী।
#প্রশ্ন: ১ জন চেয়ারম্যান কয়েকজন মেম্বার দিয়ে তা কি সম্ভব ?
✅ না , সম্ভব না।
#প্রশ্ন: তাহলে কি করতে হবে ?
✅ আমাদের দরকার স্বেচ্ছাশ্রম সমাজকর্মী। চেয়ারম্যান সাহেব সামাজিক মাধ্যমে কমিউনিটি নেতাদের জানিয়ে দিবেন এই মহামারিতে আমাদের স্বেচ্ছাশ্রম সমাজকর্মীদের সাহায্য প্রয়োজন। যারা ইউনিয়ন পরিষদের সাথে কাজ করতে চান অনুগ্রহ করে ইউনিয়নের দেওয়া হটলাইন️ 0177******* নাম্বারে ফোন দিয়ে আপনাদের নাম ঠিকানা ফোন নাম্বার রেজিস্টার করুণ। তাদের জানিয়ে রাখবেন প্রয়োজনে আপনাদের ফোন দিয়ে জানিয়ে দিব কোথায় কখন আমাদের সাহায্য করতে হবে।
#প্রশ্ন: সবাই কি এই ভাবে এগিয়ে আসবেন ?
✅ কেন আসবেন না? সবাই তো বিচ্ছিন্ন ভাবে কাজ করছেন। এখানে আমরা শৃঙ্খলার মাধ্যমে কাজ করার চেষ্টা করছি। সবাই এগিয়ে আসার কথা। দুই সপ্তাহ পরে আমরা বিচ্ছিন্ন ভাবে কাজ নাও করতে পারি। এই ভাইরাস যখন কমিউনিটি স্প্রেড হবে তখন ভয়ংকর রূপ ধারণ করবে।
#প্রশ্ন: এত স্বল্প সাহায্য ত্রাণ দিয়ে এই প্রক্রিয়া কি পরিচালনা সম্ভব?
✅ ত্রাণ যা আসবে তা স্বচ্ছ ও সুশৃঙ্খল ভাবে বণ্টন করতে পারলে আমরা আরো বেশি লোককে সাহায্য করতে পারবো।
পাঠক, ইহা একটি কাল্পনিক রূপরেখা। ত্রাণ বিতরণ নিয়ে সমাজে যে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়েছে তা যদি চলতে থাকে তাহলে যে কোন সময় তা বন্ধ করে দিতে হবে। শুধু এই মহামারী কালীন সময়ে এই ত্রাণ বিতরণ সহায়তাকে আমরা যদি নিয়ন্ত্রণের ভিতরে নিয়ে না আসতে পারি তাহলে করোনা ভাইরাসকে আমরা বাড়িতে বাড়িতে সংক্রমিত করবো।
লেখক: ফ্রিল্যান্স জার্নালিস্ট, ওয়ার্কিং ফর ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (NHS) লন্ডন, মেম্বার, দি ন্যাশনাল অটিস্টিক সোসাইটি ইউনাইটেড কিংডম।